টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনটি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
ভোটের একদিন পর কেন্দ্রের বাইরে থেকে উদ্ধার করা হয় ২টি ব্যালট পেপারের মুড়ি বই।
এ নিয়ে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আসকর (ঘোড়া প্রতীক) এবং পাঁচজন সাধারণ সদস্য প্রার্থী ওই তিনটি কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন।
ওই তিন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ষরিষাজানি মাদরাসা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিংজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।
জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর নাগরপুর উপজেলার ৩ নম্বর গয়হাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী সামছুল হক (নৌকা প্রতীক), বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান আসকর (ঘোড়া প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী মনির (আনারস) ও ইসলামিক আন্দোলনের মিজানুর রহমান (হাত পাখা)। তবে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পড়েই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার সহযোগীরা পরপর দুইবারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আসকরের এজেন্টদের ওই তিন কেন্দ্র থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেন। পরে এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বের করে দেওয়া এজেন্টদের পুনরায় কেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচ মিনিট দায়িত্ব পালন করার পর পুনরায় এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে জোরপূর্বক সিল মেরে ব্যালট পেপারগুলো বাক্সে ফেলা হয়।
এছাড়া একই কায়দায় নৌকা প্রতীকের সমর্থক সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীরা ব্যালট পেপার বাইরে নিয়ে গিয়ে সিল মারার ব্যবস্থা করেন। এ নিয়ে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কেন্দ্রের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখে প্রতিপক্ষ সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ভোট শেষ হওয়ার পরদিন বিকেলে ওই তিন কেন্দ্রের বাইরে পরে থাকা ব্যালট পেপারের মুড়ি বই এবং চারদিন পর সিলমারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়।
এদিকে পরাজিত প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোট গণনা শেষে কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপারের সব মুড়ি (বই) দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সংরক্ষণ করে তা সিলগালা অবস্থায় জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এখন পর্যন্তও ২টি ব্যালট পেপারের মুড়ি বই এবং প্রায় তিন শতাধিক ব্যালট পেপার বাইরে পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকেই দায়ি করছেন পরাজিত প্রার্থীরা। তাই ওই তিন কেন্দ্রে পুনরায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানান বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আসকর ও পাঁচজন সাধারণ সদস্য প্রার্থী।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, ভোট গণনা শেষে ব্যালট পেপার এবং মুড়ি বইগুলো বস্তায় ভরে সিলগালা করে উপজেলা কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হয়। সেই বস্তা পরবর্তীতে তার বা অন্য কারো খোলার এখতিয়ার নেই। তবে মুড়ি বই বা ব্যালট পেপার বাইরে থাকলে সেটির দায়ভার দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার। এছাড়া কোনো প্রার্থী যদি পুনরায় নির্বাচন বা ভোট গণনা করার আবেদন করেন তাহলে তাকে প্রজ্ঞাপন জারির ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে মামলা করতে হবে। এরপর আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবেন তাই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
আরএ