ঢাকা: ভ্রাম্যমাণ হকাররাও ঘুষ দিয়ে বাসে বাসে যাত্রীদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পান। তবে তাদের ঘুষ দেওয়ার বিষয়টা একটু ব্যতিক্রম।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মহাখালীগামী এনা পরিবহনে দেখা যায় হকার ফাইজুল ইসলামকে প্যাকেটজাত শসা, পেয়ারাসহ অন্য দুয়েকটি আইটেম যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন।
ছোট ছোট পলিথিনের প্যাকেটে পেয়ারা ও শসার টুকরা চিকন লোহার রডে তৈরি হাতলে সাজিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
এ সময় যাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলছিলেন , শসা খান, কচি শসা , আছে পেয়ারা। একপর্যায়ে অনেকেই তার কাছ থেকে পেয়ারা ও শসা কেনেন।
হকার ফাইজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তার বাড়ি দিনাজপুর হলেও গাজীপুর বোর্ডবাজার মালেকের বাড়ি এলাকায় এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে বাসে বাসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন। তবে বেশিরভাগ সময় শসা ও পেয়ারা বিক্রি করেন।
প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। এরমধ্যে লাভ থাকে প্রায় অর্ধেক। মাঝে মাঝে দুই হাজার টাকাও লাভ হয়।
ফাইজুল ইসলাম আরও বলেন, সব বাসে আমি উঠি না। এনা পরিবহনসহ কয়েকটি ভাল বাসে উঠি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছাড়া এসব বাসে উঠতে দেয় না। তাছাড়া খাবারের মান খুবই ভালো থাকতে হয়। না হলে বাসে উঠতে দেয় না তারা। তাছাড়া এনা বাসে অপরিচিত কোনো হকারকে উঠতে দেয় না। এনা বাসে আবার বরই ও আচার বিক্রি করা যায় না, এগুলো নিষেধ।
তিনি যখন বাসে উঠছিলেন তখন গেট খুলে দেয় হেলপার।
প্রথমেই বাসের হেলপারের হাতে ধরিয়ে দেন এক প্যাকেট শসা। তারপরেই বাসের ভেতরে আসেন যাত্রীদের কাছে।
হেলপারকে শসা ফ্রি দিলেন কিনা জানতে চাইলে একটু হাসি দিয়ে খুবই আস্তে আস্তে বলেন, ভাই এক- দুই প্যাকেট তাদের না খাওয়ালে আমাদের বাসে ওঠতে দেয় না। তাছাড়া আমরা প্রতিদিন বেশ কয়েক প্যাকেট বেশি নিয়ে আসি। বাসের স্টাফদের সেগুলো খাইয়ে তাদের মন জয়ের চেষ্টা করি। এতে আমার কোনো অভিযোগ বা লোকসান নেই।
তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন খাবারের পণ্য বিক্রি করি, দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ করি। প্রতিদিন আমরা ১০ থেকে ১৫ প্যাকেট বাস স্টাফদের জন্য ফ্রি বরাদ্দ নিয়ে রাস্তায় নামি।
হকারের এই বক্তব্য শুনে তখন এক যাত্রী বলে ওঠেন, তাহলে হকারও ঘুষ দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
এজেডএস/এমএমজেড