খুলনা: খুলনায় ‘জলবায়ু সম্মেলন ও সুন্দরবন রক্ষা’ শীর্ষক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান আলোচক ছিলেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সংগঠক সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স। বিশেষ আলোচক ছিলেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি খুলনার সংগঠক ডা. মনোজ দাশ।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি খুলনার আহ্বায়ক এস এম শাহনওয়াজ আলীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উস্থাপন করেন কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়কারী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব।
এ সময় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা আহ্বায়ক মো. নূর আলমসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়- উপকূলীয় মানুষের ত্রাণকর্তা সুন্দরবন, যার একাধিক উদারহন রয়েছে- যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, আইলা ইত্যাদি। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর রক্ষকের ভূমিকা পালন করে এলেও কিছু ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সুন্দরবনের জীববৈচিত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনসংলগ্ন কৃষি কার্যক্রম প্রায় ১৭ হাজার ১৭৯ হেক্টর বন ধ্বংস করেছে। চিংড়ি চাষ ধ্বংস করেছে আরও ৭ হাজার ৫৫৪ হেক্টর। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, অন্যান্য শিল্প প্রকল্প, সুন্দরবন সংলগ্ন ২’শ বেশি সক্রিয় কারখানা বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আছে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড, অবৈধ নৌযান চলাচল, অবৈধ গাছ কাটা এবং চোরাচালানের রুট, অবৈধভাবে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, অবাধে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের চলাচল, গোলপাতা সংগ্রহসহ বিভিন্ন সম্পদ আহরণের কারণে ভবিষ্যতে সুন্দরবনে গাছের পরিমাণ এবং বনের ঘনত্ব আরও কমে যাবে।
সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ। সুন্দরবন বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপ সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেষ্ট জটিল। দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সেই সুন্দরবনের সামনে এখন বড় বিপদ। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধংস হয়ে যেতে পারে।
সুন্দরবন সুরক্ষায় মূল প্রবন্ধে কিছু জরুরি বিষয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
ক) রামপাল তাপ বিদ্যুকেন্দ্র বন্ধ করতে হবে।
খ) দেশের আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো লাল শ্রেণির শিল্পকারখানা স্থাপন করা যাবে না।
গ) সুন্দরবন সংলগ্ন যেসব শিল্পকারখানা আছে, সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে।
ঘ) ইউনেস্কো সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সংরক্ষণে সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর 'কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা' প্রতিবেদন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঙ) সুন্দরবনকে ঘিরে সুন্দরবন সুরক্ষার স্লোগান প্রচারের আড়ালে সুন্দরবনধ্বংসী কর্ম তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
চ) সুন্দরবনের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনকে।
ছ) সুন্দরবনের নানা সমস্যা নিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে।
ঝ) সুন্দরবনের জমি উজাড় করার মতো মানবসৃষ্ট সমস্যা দূর করতে হবে।
ঞ) নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা, প্রাণী ও পাখিদের বিরক্ত না করা, ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে নদী দূষণমুক্ত রাখা এবং পণ্যবাহী নৌযান প্রবেশ বন্ধ করা।
সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে না বরং এটি এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকেও রক্ষা করে। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার জোগান দেয় এ বন। এ কারণেই এ অনন্য অরণ্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। বনের জমি উজাড় করার মতো মানবসৃষ্ট সমস্যা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
এমআরএম/এমআরএ