বরগুনা: মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরগুনার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারবর্গ। তাদের নামে বরাদ্দকৃত পল্লিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, জলাবদ্ধতা, মশা-মাছির প্রাদুর্ভাব, খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানান কারণে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পল্লির বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনরা।
বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা গ্রামে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা পল্লির উদ্বোধন করেন তৎকালীন খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। পুনর্বাসন করা হয় ৩০টি গরিব মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে। তাদের জন্য দেওয়া হয়েছিল ৬টি গভীর নলকূপ ও একটি ড্রেন। তবে সময়ের ব্যবধানে অকেজো হয়ে গেছে সব কটি নলকূপ। ময়লা আবর্জনার নিচে চাপা পড়েছে ড্রেনটি। নেই পয়ঃনিষ্কাসনের ব্যবস্থাও।
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। এ ছাড়াও মশার কামড়, ভাঙা রাস্তা ও বেড়িবাঁধ না থাকায় নানান সমস্যায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। আর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, শত চেষ্টায়ও সমাধান হয়নি এসব সমস্যার।
এখানে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যার যেন শেষ নেই। বেড়িবাঁধ না থাকায় সামান্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় ঘড়বাড়ি, ভেঙে নিয়ে যায় রাস্তাঘাট। আর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, দ্বারে দ্বারে ঘুরে তারা ক্লান্ত হলেও গুরুত্ব নেই তাদের কথার।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এখানে না থাকলে বোঝার উপায় নেই যে আসলে আমরা কতটা কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। স্বাভাবিক জোয়ারেও পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, নলকূপ। ঘরের ভেতরে পানি ঢোকে, সঙ্গে নানান ময়লা আবর্জনা, কচুরিপানা ঘরের ভেতরে চলে আসে। এর সঙ্গে থাকে সাপ ও পোকা-মাকড়ের ভয়।
মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী প্যাদা বাংলানিউজকে জানান, পল্লির ভেতরের রাস্তাগুলোও চলাচলের অনুপযোগী। কিছুদিন আগে রাস্তার খানা-খন্দে পরে ২ জন নারীর পা ভেঙে যায়। আমাদের কারও কোনো ধরনের নজর নেই। তাছাড়া ময়লা আবর্জনার স্তুপে বাড়ছে মশার প্রাদুর্ভাব।
পল্লির আরেক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ত্রিশটি পরিবার এখানে বাস করে আসছি। প্রতিটি পরিবারেই ৫/৬ জন করে লোক রয়েছে। এতগুলো লোকের জন্য মাত্র ১টি টিউবওয়েল৷ তা থেকে ঠিকভাবে পানিও ওঠে না। জোয়ারের পানি এলেই ডুবে যায় টিওবওয়েলটি।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক বাংলানিউজকে জানান, আমাদের পল্লির ড্রেনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সবসময় ড্রেন থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে। একাধিকবার উপজেলা-জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পল্লির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শিগগিরই আমি বরগুনার মুক্তিযোদ্ধা পল্লি পরিদর্শন করব। এবং বাসিন্দাদের দুর্দশা নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে।
সরকার বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সব সমস্যার সমাধান করবেন এমনটাই প্রত্যাশ্যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১
আরএ