ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোনের বাল্যবিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ঠেকালেন ভাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২১
বোনের বাল্যবিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ঠেকালেন ভাই

বাগেরহাট: বয়স বাড়িয়ে এক কিশোরীকে (১১) বিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ভাইয়ের সহযোগিতায় ব্যর্থ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। বাগেরহাট সদর উপজেলোর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সিংগা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে এই বাল্যবিয়ে আয়োজনে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বয়স বাড়াতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কৃষ্ণপদ বিশ্বাস। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে তিন দফায় ওই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তার পরিবার। তবে পরিবারের অন্যায় চেষ্টা ও অসাধু ইউপি সদস্যের বিচার দাবিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মককর্তা (ইউএনও) বরাবর আবেদন করেন ওই কিশোরীর বড় ভাই।

তিনি বলেন, আমার ছোট বোন ছোট সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস ও তার সহযোগী উৎসব রায় কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে আমার মাকে ভুল বুঝিয়ে টাকার বিনিময়ে বোনের ভুয়া জন্মসনদ ও টিকা কার্ড বানায়। তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৫ এপ্রিল, ২০১০। তা গোপন করে ৭ জুলাই, ২০০৩ হিসেবে ভুয়া টিকাকার্ড ও জন্মসনদ করে দিয়েছে ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস। ভুয়া জন্মসনদ অনুযায়ী সোমবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধায় আমার বোনকে একই গ্রামের নিলয় মৃধার ছেলে দিবস মৃধার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। পরে ইউএনও বিষয়টি জানতে পারলে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন।

পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তন করে পাশের পাতিলাখালি গ্রামে আমার মামার বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করেন। এই আয়োজনও ইউএনওর হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। এরপর পাশের জেলা পিরোজপুরের সদর উপজেলার শেখ মাটিয়া গ্রামে বিয়ের আযোজন করলে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাও বন্ধ হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, বোনের বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য প্রশাসনকে জানানোয় ইউপি সদস্য বিষ্ণপদ বিশ্বাস ও বর দিবস মৃধাসহ তার লোকজন বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আমার মাকে ভুল বুঝিয়ে ঘরে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ভুয়া জন্মসনদ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ছোট সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পিযুষ অধিকারী বলেন, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আইনের লঙ্ঘনের পাশাপাশি তার জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার শামিল। এই প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস বলেন, নিলয় মৃধার ছেলে দিবস মৃধা আমার কাছে জন্ম সনদের কাগজ নিয়ে আসলে আমি সই করে দিয়েছি। টাকার বিনিময়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমডি মাসুদ রানা বলেন, অনেকেই জন্ম সনদসহ নানা সেবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে যাচাইয়ের সুযোগ আমার থাকে না। যার কারণে জন্ম নিবন্ধনে সচিবের স্বাক্ষরের পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি সদস্যের যাচাই ও স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করেছি। বিতর্কিত ওই জন্মনিবন্ধন সনদ আমার পরিষদের। কিন্তু স্থানীয় চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ), ইউপি সদস্য ও সচিব শনাক্তের পরে আমি স্বাক্ষর করি। ওই তিন ব্যক্তি কোন কাগজের ভিত্তিতে শনাক্ত করলেন এবং স্বাক্ষর দিলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজনের কথা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে কয়েক দফায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছিল। ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে ভুয়া জন্মসনদ তৈরির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২১
এসএস শোহান/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।