নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরায় মুক্তিপণের টাকায় গেমিং ল্যাপটপ কিনতেই শিশু ইয়ামিনকে (৮) অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত চার অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান এ তথ্য জানান। এর আগে শুক্রবার রাতে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর ও পিরিজকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- উত্তর বাখরনগর গ্রামের নূরুল হকের ছেলে সিয়াম উদ্দিন (১৯), মৃত আসাদ মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (২৪), কাঞ্চন মিয়া (৫৪) ও পিরিজকন্দি গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (১৮)।
নিহত ইয়ামিন একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে এবং বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ জানায়, গত ২৮ নভেম্বর সকালে ইয়ামিনের মা সামসুন্নাহার বেগম ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার সময় ছেলেকে বাড়িতে রেখে যান। দুপুরে বাড়িতে ফেরার পর থেকে ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, ইয়ামিন তাদের হেফাজতে আছে। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেলে তাকে হত্যা করা হবে।
শিশুটির মা এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে অপহরণকারীরা পাঁচ লাখে ছেড়ে দিতে রাজি হন। পরে বিকাশে এক লাখ টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন ইয়ামিনের মা। এরপরই ইয়ামিনের সন্ধানে নামে পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালের দিকে বাখরনগর গ্রামের ডোবা থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা শিশু ইয়ামিনের বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহ উদ্ধারের পরে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার রাতে বাখরনগর গ্রাম থেকে সিয়াম ও পিরিজকান্দি গ্রাম থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ, বালিশ ও অপহরণে ব্যবহৃত মোবাইল এবং সিম।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, গেমিং ল্যাপটপ কিনে ইউটিউব থেকে টাকা উর্পাজনের জন্য শিশু ইয়ামিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়। রোববার ভোটের দিন তারা দুজন খেলার ছলে ইয়ামিনকে সিয়ামের বাড়ির নির্জন রুমে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মুখ, হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে রাখে।
পরে তারা সিআইডি ও ক্রাইম পেট্রোল থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অ্যাপস ব্যবহার করে ভিপিএনের মাধ্যমে ইয়ামিনের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণের দিনই সিয়াম ও রাসেল বালিশ চাপা দিয়ে ইয়ামিনকে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে গোয়ালঘরে রাখা হয় এবং ঘটনার চারদিন পর তা ডোবায় ফেলে আসেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে উত্তর বাখরনগর গ্রাম থেকে সুজন ও কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, আমরা মরদেহ উদ্ধারের পরই অভিযানে নেমেছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিয়াম ও রাসেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১
এনএসআর