ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, হিমেল বাতাস ও যানবাহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুরের সড়কে গণপরিবহনের তীব্র সংকট দেখা দেয়। মিরপুর ও পল্লবী এলাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে অফিসগামী ও সাধারণ মানুষদের গণপরিবহন, রিকশা ও অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
পল্লবী এলাকার বাসিন্দা তানভীর আলম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে অফিস করতে মালিবাগ যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে পড়েছেন বিপাকে। ভিজেছেন বৃষ্টিতে। তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, অফিসে যাব কিন্তু বৃষ্টির কারণে বাস পাচ্ছি না। যে দুই-একটা বাস আসছে সেগুলোতে ওঠা যাচ্ছে না।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি এলাকার অলিগলিতে জলাবদ্ধতাসহ কাদার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীদের বৃষ্টিতে ও পানিতে ভিজে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিন বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতাকে পুঁজি করে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা নিতে দেখা গেছে। অনেক রিকশাচালক রাস্তায় জমে থাকা পানি পাড় করছেন। ১০ হাত জায়গা পানি পাড়ের জন্য ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠে নেমেছে সিটি করপোরেশনের লোকজন। তাদের বিভিন্ন ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার ও ম্যানহোল খুলে দিয়ে দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে।
রিকশাচালক মোখলেস বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ভিজেই রিকশা চালাইতেছি। পাবলিক বেশি ভাড়া দিতে চান না। অনেক রাস্তায় ঢাল থাকে। টানতে অনেক কষ্ট হয়। পাবলিক বোঝেন না। ১০-২০ টাকা বেশি চাইলেই রাগ করেন।
ভিক্টোরিয়া পার্ক বাস স্টেশনে বাসের সংখ্যা কম দেখা গেছে। যাত্রীদের ছাতা মাথায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যে দুই-একটা বাস আসছে সেগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে।
খিলগাঁও গোড়ানের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সকাল সাড়ে আটটায় বাসা থেকে বের হয়েছি, যাবো শান্তিনগর স্টার প্লাস মার্কেটে। ওখানে ছোট একটি দোকান আছে আমার। সড়কে তেমন যানবাহনও ছিল না। পরে বিভিন্নভাবে ভেঙে ভেঙে সাড়ে ১০টার দিকে দোকানে পৌঁছাই।
উত্তরা আব্দুল্লাহপুরে আব্দুল লতিফ রিপন জানান, এই সময় বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নিচু জায়গায়গুলো বৃষ্টির কারণে একেবারেই ডুবে গেছে। প্রতিদিনের মতো দৈনন্দিন কাজে রাস্তায় বেরিয়ে বেগ পোহাতে হয়েছে।
রাজধানীতে অনেকেই এই মাঝারি ধরনের বৃষ্টির কারণে জরুরি কারণ ছাড়া বাসা থেকে তেমন বের হয়নি। ধানমন্ডি শংকর থেকে মাসুম ও নিলন জানান, গতকাল রাত থেকে ভারী বর্ষণের কারণে অতি জরুরি জিনিসপত্র আগে থেকেই কিনে রেখেছি। জরুরি কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছি না আপাতত।
তবে, সকালের দিকে যেভাবে হোক কর্মজীবীরা কর্মস্থলে যেতে পারলেও সন্ধ্যার পরে কিভাবে বাড়ি ফিরবেন এই নিয়ে তারা চিন্তিত। বর্ষণ চলমান থাকলে সড়কে যানজট ও জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ি ফেরার সময় আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে তাদের।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সোমবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্রগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (২২-৪৩ মি.মি.) থেকে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে।
সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কি. মি. বেগে অস্থায়ী দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এজেডএস/এমএমআই/জিসিজি/এমআরএ