খুলনা: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ফের মাথায় হাত পড়ল খুলনার কৃষকদের। টানা প্রায় তিনদিনের বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে, বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) ডুমুরিয়ার খর্ণিয়ার কৃষক আবু হানিফ মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম, পাকা আমন ধান, বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, আলু, গম, বোরোর বীজতলা, সরিষাসহ শীতকালীন ফসলের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। পানি না সরলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর খুলনা জেলায় ৯৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০ ভাগ ধান পেঁকে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে আগামীতে কৃষি প্রণোদনা বা পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর ইতোমধ্যে কৃষকের পাশে থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য উপসহকারী কৃষি অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ডুমুরিয়ায় মোট আমন আবাদ ১৫৬২৫ হেক্টর জমিতে। কাটা হয়েছে ১০১২৫ হেক্টর। মাঠে রয়েছে ৫৫০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৮১২৫ মেট্রিকটন। অতিবৃষ্টিতে আমনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে, ১৩০ হেক্টর বোরো বীজতলার ৫ হেক্টর আক্রান্ত, ১৩০ হেক্টর সরিষার, ৫ হেক্টর এবং ২৫০০ হেক্টর সবজির মধ্যে ১০ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন সমস্যা হবে না।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে খুলনার কয়রা ও পাইকগাছার অধিকাংশ এলাকার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বোরো বীজতলা। অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা কয়রার প্রতিটি নদ-নদীতে অতি মাত্রায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হরিহরপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন বেঁড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রামের আংশিক প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার দুপুরে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু সরেজমিনে ঘঠনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তাদের নিদিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অধিক জোয়ারের পানি নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর দিয়ে প্রথমে ভেতরে প্রবেশ করে।
স্থানীয়রা জানায়, হরিহরপুর গ্রামের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়ে রোববার দুপুরে গাতিরঘেরি গ্রামের রিং বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় দু’টি গ্রাম জোয়ারভাটা অব্যাহত আছে। দ্রুত গাতিঘেরির রিং বাঁধ ঠিক করা না হলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
জানা গেছে, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নির্মাণ কাজ দেরি করায় শীতের এই মৌসুমে বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেকের। সেজন্য স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ঠিকাদার কালাম শেখকে দায়ী করেছেন।
এ বিষয় পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তা মশিউল আলম জানান, ঠিকাদার সময়মত কাজ না করা এবং আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটা ঘটেছে। দ্রুত বাঁধ রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এমআরএম/এমআরএ