সিরাজগঞ্জ: জমজ বলতে যেটা বোঝায় তা হলো দু’ জন সহদোর একই মায়ের পেটে প্রায় একই সময়ে জন্মগ্রহণ করবে। তাদের চেহারাতেও থাকবে হুবুহু মিল।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই জমজ বোন অবনী হক অর্পা ও অতুন হক অর্থির মধ্যে তেমনটাই দেখা গেছে। তাদের চেহারার পাশাপাশি লেখাপাড়া, সকল পরীক্ষার ফলাফল, শখ, স্বপ্ন সবকিছুতেই রয়েছে দারুণ মিল। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় বিষ্ময়কর সাফল্য অর্জন করে চলেছে তারা।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চকবরু গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক এস এম আমিনুল হক স্বপন ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মোছা: লাভলী খাতুন দম্পত্তির সন্তান তারা।
১৯ বছর বয়সী এ জমজ দু’বোন সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় দু’জন দুই ভবন থেকে পরীক্ষা দিলেও একই নম্বর ৫৩ পেয়েছে। ফলে দু’জনের মেধা স্কোর হয়েছে ৭২.৮৮ আর মেধাক্রম ১৬৩৬ ও ১৬৩৭। এমন বিষ্ময়কর মিল ও সাফল্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এসব বিষয় জানতে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার একটি ভাড়া বাড়িতে গিয়ে কথা হয় দু’ বোন ও তাদের পরিবারের সঙ্গে।
কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে তারা দবিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে দু’জনেই জিপিএ-৫ অর্জন করে এবং বড় বোন অবনী হক অর্পা সাধারণ বৃত্তিলাভ করে।
আবার ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ছোট বোন অতুন হক অর্থি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিলাভ করে। তাদের বাবার কর্মস্থল দক্ষিণ পুস্তিগাছা বনানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে দু’ জনেই জিপিএ-৫ লাভ করে।
২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে দু’ জনেই জিপিএ-৪.৯৪ পাওয়ার পাশাপাশি সবগুলো বিষয়ে কাছাকাছি নম্বরও পায়। ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এবারও দু’ জনেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে এবং দু’ জনেই সাধারণ বৃত্তিলাভ করে।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, চেহারা ও মেধায় দু’ জনের হুবুহু মিল থাকার পর আবার শখ, স্বপ্ন, সাধ-আহ্লাদও এক। তারা দু’জনেই অবসরে গল্পের বই পড়তে এবং ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। দু’জনের প্রিয় খাবার আইসক্রিম, চাইনিজ ও বিরিয়ানি। এছাড়াও অনেক বিষয়েই তাদের একে অপরের সঙ্গে বিষ্ময়কর মিল।
নাম অবনী হক অর্পা ও অতুন হক অর্থি বলেন, আমাদের মধ্যে দেড় মিনিটের বয়সের ব্যবধান। আমাদের দু’জনের মধ্যে কখনো কোনদিন ঝগড়া হয়নি। শিশুকালে একজনের যে অসুখ হয়েছে অপরজনেরো তাই হয়েছে। তবে এখন আর সেটা হয় না।
তারা বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অপ প্রফেশনাল (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষাতেও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছি। তবে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিজ্ঞান বিষয়ে চান্স পেয়েছি। দু’জনেই একই বিষয়ে পড়তে চাই।
অর্পা ও অর্থি জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি বই সংগ্রহ এবং পড়া তাদের প্রধান শখ। কিশোর উপন্যাস, গোয়েন্দাভিত্তিক গল্প, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, সাইন্স ফিকেশন ভূতের গল্প পড়তে ভালো লাগে তাদের। দু’জনের একই ধরণের বই পড়ার অভ্যাস।
ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা জানিয়ে অর্পা ও অর্থি বলেন, প্রথমে ভালো মানুষ হতে চাই। তারপর বিসিএস ফরেন ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।
অর্পা ও অর্থির বাবা দক্ষিণ পুস্তিগাছা বনানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আমিনুল হক স্বপন বলেন, আমার এই দুই মেয়ে ছাড়া আর কোনো সন্তান নেই। তাদের আমি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। ওরা সবক্ষেত্রেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো বলেন, এস এম আমিনুল হকের বাবা এস এম মোজাম্মেল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই পরিবারটি একটি শিক্ষিত পরিবার। তার দুটি জমজ মেয়েও অনেক মেধাবী। তারা সকল পরীক্ষাতে একই রেজাল্ট করেছে। আমি ওই দুই জমজ বোনের সফলতা কামনা করি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯ , ২০২১
এনএটি