ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কুয়েটের সেই শিক্ষকের স্ত্রী-সন্তান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কুয়েটের সেই শিক্ষকের স্ত্রী-সন্তান

চুয়াডাঙ্গা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যুতে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন। এরই মধ্যে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিতে আরও নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কা বিরাজ করছে স্ত্রী-সন্তান ও পরিজনের মধ্যে।

 

বর্তমানে ড. সেলিমের স্ত্রী তার বাবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের তালতলা গ্রামে অবস্থান করছেন। সেখানে বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ড. সেলিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন।

সাবিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের পর থেকে হুমকি-ধামকি বেশি আসছে। অশ্রাব্য ভাষায় উচ্চস্বরে ধামকি দেওয়া হচ্ছে। কুয়েট কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমি আইনগত পদক্ষেপও নিতে পারছি না। এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় আমি আতঙ্কিত, আশঙ্কিত।

সাবিনা খাতুন আরও বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। সে মারা যাওয়ার আগের রাতে লালন শাহ হলে ছাত্ররা মিটিং করে। ওই মিটিংয়ে সে বেশি সময় ছিল না। সে চলে আসার পরেও নাকি কয়েক ঘণ্টা মিটিং হয়েছে। ওই মিটিংয়ে কারা ছিল, সেখানে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা তদন্তের প্রয়োজন। তবে, সবকিছু হলের ম্যানেজারিং নিয়ে হয়েছে এটা আমি নিশ্চিত।

এদিকে প্রফেসর বাবা হারিয়ে মায়ের মতোই দিশা হারিয়েছে একমাত্র শিশুকন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস আনিকা। বর্তমানে ড. সেলিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন তার শিশুকন্যা নিয়ে বাবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামে অবস্থান করছেন।

এ সময় ড. সেলিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, একমাত্র সাড়ে ৬ বছর বয়সী শিশুকন্যাকে নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তা ও শঙ্কায় পড়েছি। একটি বিপদ কাটতে না কাটতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকিতে আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এরই মধ্যে ছোট্ট শিশু সন্তানটি শুধুই তার বাবাকে খুঁজে ফিরছে। সে হয়তো বাবার অনুপস্থিতি অনুধাবন করতে পারছে। বাবা হারানোর পর থেকে নাওয়া খাওয়া ভুলেই গেছে আনিকা। দরজায় কেউ টোকা দিলেই দৌড়ে গিয়ে দেখে বাবা ফিরেছে কিনা ছুটে যাচ্ছে

ড. সেলিমের শ্যালক মো. হাসান বলেন, আমার ভগ্নিপতি ছিলেন মাটির মানুষ। মানুষের সঙ্গেও মিশতো খোলা মনে। তিনি ছিলেন শতভাগ সৎ মানুষ। এমন একজন মানুষের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থায় তার মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি করতে হবে।

তবে, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, হুমকি-ধামকি কিংবা নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেননি। তবে, আমরা ওই পরিবারটির প্রতি বিশেষ নজর রাখবো।

৩০ নভেম্বর মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) পদে নিজের লোককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে সাদমান নাহিয়ান ও তার অনুগতদের অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন ড. সেলিম।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সাদমান নাহিয়ান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রায় আধ ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য বাসায় যান। দুপুর ২টার দিকে স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের নামে জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিমের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুয়েট প্রশাসন। আর দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পাশপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩ ডিসেম্বর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন। আর ড. সেলিম হোসেনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সদ্য প্রয়াত শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের আবেদন করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।