ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস ১০ ডিসেম্বর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস ১০ ডিসেম্বর ...

ভোলা: ১০ দিসেম্বর শুক্রবার ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস।  

১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়ে রচিত হয়েছে ভোলায় প্রথম স্বাধীনতার ইতিহাস।

 দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। আর তখনি সমগ্র ভোলার মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে এক এক করে চালায় পৈশাসিক কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরিহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হয়। লাশগুলোও দাফন করা হয় এখানেই।

এছাড়াও ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারের ধরে এনে হত্যা করে তেতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেতুলিয়ার পানি।

পাক-হানাদার বাহিনীরা বহু নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করে সকাল বেলা নির্মমভাবে হত্যা করে। তৎকালীন সময়ে অগণিত মানুষ মারা যায় ওই হানাদার বাহিনীর হাতে। সেখানে গণকবর দেওয়া হয় নিহতদের। সেটি এখন বধ্য ভুমি।

১৯৭১-এ দেশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সরকারি স্কুল মাঠ, বাংলা স্কুল, টাউন স্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। ওই সব যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। পাশাপাশি বহু পাক সেনাও মারা যায়।

অবশেষে ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প থেকে লঞ্চে করে পাক বাহিনী পলায়ন করে। ওই দিনই ভোলার আকাশে ওড়ানো হয় স্বাধীন দেশের পতাকা।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯ ডিসেম্বর আমরা ভোলা ওয়াপদা এলাকায় চারদিক থেকে পাক হানাদের ঘিরে ফেলি, এক পর্যায়ে তারা যখন দেখলো তাদের মুভ করার মত কোনো অবস্থা নেই তখন ভোর রাতের দিকে গুলিবর্ষণ করতে করতে তারা পালিয়ে যায়, তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। লঞ্চে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর এলাকায় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় পাক হানাদের লঞ্চটি নিমজ্জিত হয়।

তিনি জানান, ভোলাতে পাক হানাদার বাহিনীর আসার পর আমরা যুদ্ধে অংশ নেই। ভোলা সরকারি স্কুল এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চরফ্যাশন থানায় আক্রমণ করে অস্ত্র সংগ্রহ করে, ২৭টি অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেই।

প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলা ওয়াপদা ভবন দখল করে পাক-হানাদাররা শত শত মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করে। জীবন বাজি রেখে ভোলার অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে ভোলাকে হানাদার মুক্ত করে।

এদিকে, ভোলা মুক্ত দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে র‍্যালী ও আলোচনাসভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।