ঢাকা: সন্তান যেন কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধে না জড়ায় কিংবা টিকটক-লাইকির ফাঁদে পড়ে পাচারের শিকার না হয় সে বিষয়ে অভিভাবকদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
‘মানবাধিকার দিবস- ২০২১’ উপলক্ষে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-অডিটোরিয়ামে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ আয়োজিত আলোচনায় প্রচারিত ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। ’
‘সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা টিকটক, লাইকির লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে মানব পাচারের শিকারে পরিণত না হয়। ’
মাদকের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানব পাচার ও মাদকের ভয়াবহতা সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। মাদকের ছোবলে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এ সব থেকে দূরে রাখতে হবে। ’
‘মাদক, মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। সচেতনতা, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক প্রতিরোধ ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এই অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ’
সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও সমান ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ’
পরিবার, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে সবাইকে বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মিয়ানমার, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও সিরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবিক সংকট চলছে। এ সব সংকট বা মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে বিশ্বের সব দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। ’
মানবাধিকার কর্মীদের দায়িত্ব পালনকালে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় সেদিকেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার তাগিদ দেন তিনি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী মানবিক বিপর্যয় বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখছি। জরুরি ভিত্তিতে এই বৈষম্য দূর করতে হবে। ’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে হবে। বিশ্বকে করোনার ছোবল থেকে বাঁচাতে হলে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। ’
উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষা ও তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিজের দেশে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেশের মানুষের মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় আরও দৃশ্যমান অবদান রাখার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের ভরসার স্থল হিসেবে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জনসাধারণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে কমিশনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সামগ্রিক কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, হিজড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় এ কমিশনকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবীর, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
এমইউএম/আরএ