সিরাজগঞ্জ: প্রতিবেশীদের সামনে কথা দিয়েছিলেন ‘বড় হলে ছেলেকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন’। ২৫ বছর আগের দেওয়া সেই কথা রাখলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার বাসিন্দা তাড়াশ সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রব্বেল প্রামাণিক।
পালিত সন্তান (বড় ভাইয়ের ছেলে) মো. রতন প্রামাণিককে হাতির পিঠে চড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করিয়ে আনলেন।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই বিয়ের বউভাতের আয়োজন হয় রব্বেল প্রামাণিকের বাড়িতে। অনুষ্ঠানে প্রায় চার হাজার মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) একই উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের দিঘিসগুনা গ্রামের রইচ উদ্দিনের মেয়ে জোসনা খাতুনের (২০) সঙ্গে বিয়ে হয় রতন প্রামাণিকের। হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বরকে এবং হাতির পিঠে চড়িয়েই বর-কনে ফিরে আসেন বাড়িতে। প্রায় দেড় হাজার বরযাত্রী ছাড়াও হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভিড় ছিল এই বিয়েকে ঘিরে।
বরযাত্রী মো. মোসলেম উদ্দিনসহ স্থানীয়রা জানান, ২৫ বছর আগে রব্বেল প্রামাণিকের বড় ভাই একদিল প্রামাণিকের স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর মারা যান। তখন রব্বেল প্রামাণিক ও তার স্ত্রী কমলা খাতুন বড় ভাইয়ের মা-হারা সন্তানকে কোলে তুলে নেন। মো. রতন প্রামাণিক নাম রেখে ওই সন্তানকে তারা লালন-পালন করতে থাকেন। এ সময় রব্বেল প্রামাণিক গ্রামবাসীদের সামনে ঘোষণা দেন, ছেলে বড় হলে তাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন এবং হাতির পিঠে চড়িয়েই ভাতিজার বউকে নিয়ে আসবেন।
নিজের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মতো ভাতিজাকেও সন্তানের মতো লালন-পালন করেন তিনি। তাকে ৩০ পারা কোরআনের হাফেজ করার জন্য ইরাকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দালালের খপ্পরে পরে সেখানে বিপাকে পড়ে রতন। পরে সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন চাচা (পালক বাবা) রব্বেল প্রামাণিক। দেশে আনার পর ৯ বিঘা জমিসহ বাড়িঘর করে দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) তার বিয়ের আয়োজন করা হয়।
২৫ বছর আগের দেওয়া প্রতিশ্রুত অনুযায়ী হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করানোর কথা বললে রব্বেল প্রামাণিকের বড় দুই ছেলে হযরত আলী প্রামাণিক ও ওমর ফারুক প্রামাণিক বগুড়ায় গিয়ে একটি সার্কাস কোম্পানি থেকে দুইদিনে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে হাতি নিয়ে আসেন। ওই হাতিকে গোসল করিয়ে শরীরে বর ও কনের নাম লিখে দেওয়া হয়।
মো. রব্বেল বাংলানিউজকে বলেন, রতন আমার বড় ভাইয়ের ছেলে হলেও আমি তাকে সন্তানের মতো মানুষ করেছি। আমার আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। সবার ছোট রতন। ও আমাকে বাবা এবং আমার স্ত্রীকে মা বলেই ডাকে। ছোটবেলায় প্রতিবেশীদের সামনে কথা দিয়েছিলাম হাতিতে চড়িয়ে বিয়ে করাবো। সেই শখ মেটাতেই এমন আয়োজন।
১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সাবেক এই ইউপি সদস্য আরও বলেন, যৌতুকবিহীন এ বিয়েতে আমি নিজেই ৫ ভরি সোনার গহনা দিয়ে বউমাকে ঘরে এনেছি। বিয়েতে দেড় হাজারেরও বেশি বরযাত্রী গিয়েছিল। এদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনই প্রায় ৭/৮শ জন। বাকিদের মধ্যে নিজ গ্রাম ছাড়াও আরও ১০ গ্রামের লোক ছিল। শুক্রবার বউভাতের অনুষ্ঠানে চার হাজার লোকের আয়োজন করা হয়েছে।
বর মো. রতন বলেন, আমার বাবার (রব্বেল প্রামাণিক) শখ ছিল আমাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাবেন। তার এই শখ পূরণ করতেই এই আয়োজন। আমার বড় ভাইয়েরা হাতি নিয়ে এসেছেন।
তাড়াশ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, ওই বিয়েতে আমারও দাওয়াত ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত একটি কাজ থাকায় যেতে পারিনি। তবে যেটুকু শুনেছি তাতে এমন বিয়ে সচরাচর দেখা যায় না। হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে, দেড় হাজার বরযাত্রী এবং বউভাতে চার হাজার মানুষ খাওয়ানো-এসব আয়োজন এ এলাকায় বিরল। রব্বেল প্রামাণিক আসলেই ভাল মনের মানুষ। তিনি ২৫ বছর আগে দেওয়া কথা রেখেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
আরএ