সুনামগঞ্জ: অন্ধত্বকে জয় করে এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার পর এবার এইএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দৃষ্টিহীন চয়ন তালুকদার। চয়ন জগন্নাথপুর পৌরসভার ভবানীপুরের নিতাই তালুকদারের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে চয়ন। অন্যের সহযোগিতায় লিখে বিশেষ পদ্ধতিতে সে এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নেয়।
স্বরুপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম পরীক্ষা শেষে চয়ন জানায়, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। জন্মগতভাবে দু’চোখ অন্ধ থাকায় পড়ালেখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে তার সমবয়সী ছোট বোন মৌসুমী তালুকদার যখন পড়ার টেবিলে বসে পড়ত তখন তার পাশে বসে শুনে শুনে সে পড়া মুখস্ত করে ফেলত। পরে সে ওই পড়া বলত অন্যজন লিখে দিত। লেখাপড়ার প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার বাবা তাকে ভর্তি করে দেন। ২০১৯ সালে আব্দুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় শ্রুতি লেখন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাকে শ্রুতি লেখনে সহায়তা করেন বন্ধু মাজহারুল ইসলাম। মাজহারুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষার সময়ও শ্রুতি লেখনের দায়িত্ব পালন করেন।
চয়নের বাবা নিতাই তালুকদার জানান, জন্মগতভাবে আমার ছেলের দুচোখে আলো নেই। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। ভাইবোন মিলে একসঙ্গে পড়ালেখা করে এবার দুজন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। অভাব অনটনের কারণে ঠিকমতো তাদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারছি না।
চয়নের শ্রুতি লেখন মাজহারুল ইসলাম বলেন, চয়ন লেখাপড়ায় খুবই ভাল। চয়ন বলে দেয়, আমি শুধু খাতায় লিখে দেই। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।
জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, চয়নকে শিক্ষা বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখনের অনুমতি এনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার সফলতা কামনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
আরএ