পঞ্চগড়: দুই ছেলে ও বউয়ের হাতে অমানবিক মারধরের অভিযোগ এনে হালিমা খাতুন নামের এক সত্তোর্ধ্ব মা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসময় অভিযোগ করে বলেন সন্তানের হাতে মারধরের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ছেলে ও ছেলের বউ কর্তৃক প্রাণনাশের হুমকির শিকার হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, নির্যাতিত ভুক্তভোগী ওই মায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া এলাকায়৷
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই বিষয়টি জানান বৃদ্ধা হালিমা খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী মা হালিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে আব্দুল হামিদ (৩৮) ও হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৩৫) এবং হামিদের স্ত্রী জান্নাত (৩০) দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। যা আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে স্বামীর সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মধ্যে আংশিক সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রয় করলে তারা কিভাবে জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করা যায় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। গত ৬ ডিসেম্বর (সোমবার) সকালে আমার বসতবাড়ির টিনশেড পাকা ঘরের সিঁড়ি মিস্ত্রি দ্বারা কাজ করার সময় তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লাঠি, কোদাল ও ছোরা নিয়ে হামলা চালাতে থাকে। এসময় কোদাল দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দেন। এতে আমি বাধা দিতে গেলে আমার বড় বউমা ফাহমিদা আক্তারের মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করে ওরা। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি।
বড় বউমাকে আমি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে নিয়ে গেলে আমার মাদকাসক্ত দুই ছেলে ও হামিদের স্ত্রী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। আমি গালিগালাজ করার কারণ জানতে চাইলে তারা ধারালো ছোরা (ছুরি) দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এসময় আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি৷ এরপরেও মেঝো ছেলে হামিদের বউ জান্নাত আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এ সুযোগে আমার ঘরে ঢুকে ট্রাংকের তালা ভেঙে জমি বিক্রির ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আমার বড় বউমার স্বর্ণ-গহনা নিয়ে চলে যায়৷
আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ছুটে এলে তাদেরও হুমকি প্রদর্শন করে তারা। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমি মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। ছেলে হয়ে মাকে চরিত্রহীন বলে বারবার উত্ত্যক্ত করছে। গলায় রশি বেঁধে মরতে বলছে। তাই আমাকে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করতে হয়েছে।
তবে আমি থানায় অভিযোগ করলেও এখনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমি থানায় কিংবা আদালতে যেতে পারছিনা৷ মামলার কথা শুনলেই তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এসময় তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ২৯ বছর আগে আমার স্বামী তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অতি কষ্টে আমি সন্তানদের লালন পালন করে বড় করেছি। তারা বড় হয়ে এখন আর আমার খোঁজ খবর নেয় না৷ কি খাই, না খাই কোনো খোঁজ খবর না নিয়ে বরং দীর্ঘদিন ধরে দুই ছেলে দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।
এসময় পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসীর আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে হালিমা খাতুনের বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম ও বড় বউমা মাহমুদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ করে মামলা এন্টির সময় চেয়েছেন ওই নারী। তিনি যদি এই মুহূর্তেই মামলাটি করতে চান তাহলে আমরা মামলাটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
আরএ