ঢাকা: সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যের অভাবে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেছেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য লুকানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘মহামারি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ: অভিজ্ঞতা অর্জন ও নীতি প্রণয়ন’ শীর্ষক সম্মেলনের প্রথম দিনে এসব কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য সুলতানা কামাল।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তার প্রভাব অর্থনীতিতে রয়েছে।
তবে তথ্য-উপাত্ত সঠিক সময়ে সরবরাহের ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে। তবেই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে। সরকার পছন্দ করুক আর না করুক, আমরা আমাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গবেষণা করব, উপস্থাপন করব। ’
পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি আরো বলেন, তথ্য দেওয়ার জন্য সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে কী প্রভাব হলো, সেটা ২০২৫ সালে গিয়ে তথ্য দিলে হবে না। এটি তখন নীতিনির্ধারণে কোনো কাজে আসবে না। আমরা বিবিএসকে আমন্ত্রণ জানাব, যদি আমাদের তথ্যে ভুল থাকে, তাহলে আসুন, সঠিক তথ্য দিন।
এর আগে ‘কভিড নিয়ে ঐকমত্য: অতিমারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সঠিক তথ্যের অভাবে সঠিক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও শিশুরা এই প্যাকেজ পায়নি। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ অন্যান্য যে খাতে বরাদ্দ রেখেছিল, তা জিডিপির আকারের তুলনায় অনেক কম। নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী সহায়তাও ছিল অনেক কম। ছিল না মনিটরিং।
ড. দেবপ্রিয় আরো বলেন, করোনাকলে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছিল, যার ফলাফল শিক্ষা ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি। গ্রামীণ এলাকায় অনেক শিক্ষার্থী ফোনের অভাবে, ডাটার অভাবে অনলাইনে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারেনি। আবার কোনো কোনো পরিবারের মাসে এক হাজার টাকার মোবাইল ডাটা কেনার সামর্থ্যও ছিল না। অনেক মানুষ তাদের খাওয়ার খরচ কমিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সুলতানা কামাল বলেন, তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে আমাদের ভীষণ নৈরাজ্য আছে। আমি সাধারণত সরকারের বিষয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাই, কিন্তু জবাব পাই না। যখন নীতিনির্ধারকরা কথা বলেন, কিসের ওপর দাঁড়িয়ে, কোন বাস্তবতার কথা বলেন, সেটা নিয়ে আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে।
প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকারের কাজে প্রতিনিয়ত বাধা আছে। অভ্যন্তরীণ বাধা যেমন আছে, তেমনি বিদেশের বাধাও আছে। যারা বাধা দিচ্ছেন, তাদের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। আমাদেরও এজেন্ডা আছে। আমাদের এজেন্ডা হলো দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমানের উন্নয়ন। এখন কেউ না খেয়ে থাকে না। গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন আগের থেকে উন্নত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইশতিয়াক বারি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এনটি