বরগুনা: বরগুনায় বাঁধের সংলগ্ন নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে নদীর চরাঞ্চলের কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।
বরগুনায় ইটভাটায় ইট তৈরি মৌসুমের আগেই বরগুনায় ইটভাটা মালিকরা ইট তৈরির জন্য নদীর তীরের মাটি কেটে নিচ্ছেন। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের খুব কাছে চর-তীর থেকে মাটি কাটছেন তারা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধ ঝুঁকিতে রেখে নদীর তীর থেকে মাটি কাটা আইনত অপরাধ। একই কথা জানান পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কাযালয়ের কর্মকর্তারা। বাঁধ সংলগ্ন নদীর চর থেকে মাটি কাটা যাবে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনার বিষখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছয়টি ইটভাটায় মৌসুম শুরুর আগেই ইট তৈরির জন্য ভাটা মালিকরা নদী চরে-তীর থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন। ফলে ভাঙনে হুমকির মুখে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনটকি এলাকা।
ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে জেলায় প্রায় ৫০টির মতো ইটভাটা রয়েছে। কিন্তু এসব ভাটার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটার উৎপাদনের অনুমতি পত্র নেই বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকরা।
হরিদ্রবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মাইনুল বাংলানিউজকে জানান, এটি ভাঙন কবলিত এলাকা, যেভাবে ইট তৈরির জন্য চরের মাটি কাটা হচ্ছে তাতে দুই -এক বছরে মধ্যে এই এলাকার নদীর চর শেষ হয়ে যাবে,এর ফলে বাঁধ নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।
আরএসবি ইটভাটার শ্রমিক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এই ভাটায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রমিকের কাজ করছি। ভাটাসংলগ্ন নদীতে জেগে ওঠা চরে ইট–সুরকি ফেলে ভাটায় আয়তন বাড়ানো হচ্ছে। এক দিকে ইট তৈরির জন্য নদীর তীরের মাটি কাটা হচ্ছে,অন্য দিকে নদীতে জেগে ওঠা চরদখল করছেন। জানতে চাইলে আরএসবি ব্রিকসের মালিক গোলাম মোস্তফা কিসলু বাংলানিউজকে বলেন, নদীর তীরের মাটি কাটার তথ্য সত্য না, আমার রেকর্ড করা সম্পত্তি এখানে নদীর কোনো জমি নাই। আল মামুন এন্টারপ্রাইজ ব্রিকসের মালিক বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে বাংলানিউজকে জানান, যেখান থেকে মাটি কাটা হয়েছে তা আমার জমি। নদী বা সরকারি কোনো জমি নেই এখানে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) বরগুনা নদীবন্দরের কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন,ভাটা সম্প্রসারণের জন্য নদীতে জেগে ওঠা চর দখল করার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। বাইনচটকি এলাকার কালির চর পর্যন্ত ছয়টি ইটভাটা রয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চর দখল করে ইটভাটা গড়ে তোলার কারণে যদি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয় তা হলে এসব ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এসআইএস