ঢাকা: জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অনুদান চুক্তি এবং আলোচনার রেকর্ড (চুক্তিপত্রে) সই হয়েছে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) জাইকা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দুটি প্রকল্পের জন্য নোট বিনিময় ও অনুদান চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। বাকি তিনটি কারিগরি সহযোগিতা প্রকল্পগুলোর চুক্তিপত্রে সই করেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুদান সহায়তা প্রকল্প:
হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ প্রকল্প
ইমপ্রুভমেন্ট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ফেসেলিটিজ প্রকল্প
টেকনিক্যাল কো-অপারেশন প্রকল্প (প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রকল্প)
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব নার্সিং সার্ভিসেস ফেজ-২ প্রকল্প
স্ট্রেংথেনিং ক্যাপাসিটি ফর সিটি করপোরেশনস প্রকল্প
ইমপ্রুভিং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প
হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ (জেডিএস) প্রকল্প
জেডিএস একটি অনুদান সহায়তা যা বাংলাদেশের সেইসব তরুণ ও উদ্যোমী কর্মকর্তাদের জন্য যারা নিজ দেশের জনগণের সেবায় কাজে লাগতে জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স থেকে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করেন। একাডেমিক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এই প্রোগ্রামটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে থেকে বিভিন্ন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে তোলে। এ বছর বাংলাদেশে জেডিএস স্কলারশিপের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ ২০ বছরে এ পর্যন্ত ৪৫৭ বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা জাপানে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে ৪৬২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রজেক্ট ফর ইমপ্রুভমেন্ট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এই প্রকল্পের আওতায় জাপান সরকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টকে (বিআইজিএম) ২.৫ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অনুদান দিচ্ছে, এতে করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি খাতের এক্সিকিউটিভদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিবেশকে উন্নত করা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের নির্বাহীদের নীতি নির্ধারণের দক্ষতা বিকাশে অবদান রাখবে। বিআইজিএম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান যা সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক পলিসি বা জননীতি গবেষণা জোরদার করতে কাজ করেন এমন দক্ষ মানব সম্পদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে অবদান রাখবে এ প্রকল্প, যা পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে।
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব নার্সিং সার্ভিসেস ফেজ-২ প্রকল্প
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে নার্স সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে নার্সের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত নীতিমালার অধীনে নার্সদের মান ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব নার্সিং সার্ভিসেস ফেজ টু প্রকল্পটির লক্ষ্য নার্সিং প্রশাসন ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশের ৮টি পাবলিক নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার বাস্তবায়ন ব্যবস্থা জোরদার করতে সহায়তা করা যা বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে অবদান রাখে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নার্সিং প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা জোরদার করা হবে, বিএসসির জন্য নার্সিং শিক্ষার বাস্তবায়ন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, সহযোগী হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল নার্সিং অনুশীলনের বাস্তবায়ন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, নার্সিং কলেজ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করা হবে।
স্ট্রেংথেনিং ক্যাপাসিটি ফর সিটি করপোরেশনস প্রকল্প। এ প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো সব সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক সেবার মানকে উন্নত করার মাধ্যমে একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। জাইকা ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের সক্ষমতা জোরদার করতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল বাস্তবায়নে পাঁচ সিটি করপোরেশনের জন্য ‘ইনক্লুসিভ সিটি গভর্নেন্স’ প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তিগত ও ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পটি সমস্ত সিটি করপোরেশনে কাজের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করবে এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা শক্তিশালী করার ভিত্তি স্থাপন করবে। স্ট্র্যাটেজি ফর গভর্ন্যান্স ইমপ্রুভমেন্টে ফর সিটি করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কার্যাবলীর উন্নতি ঘটাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
ইমপ্রুভিং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার সুবিধা, দক্ষতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করার মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আমদানি কার্গো হ্যান্ডলিং, রপ্তানি কার্গো হ্যান্ডলিং, র্যাম্প সার্ভিস, গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্টের অপারেশন, সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইমপ্রুভিং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। জিএসই অপারেশনের জন্য মানসম্পন্ন অপারেটিং পদ্ধতি তৈরি করবে। এটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য আরও সুশৃঙ্খল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করবে যা তাদের নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিং, কার্গোর ক্ষতি ও দুর্ঘটনা কমতে পাবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্ষমতা উন্নত হলে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো , যাত্রী এবং মালবহকরা উপকৃত হবে, এতে করে বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
আরআইএস