ঢাকা: প্রায় ১০/১২ বছর ধরেই গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গৃহস্থের গরু ক্রয় করে নিজের বাড়িতে লালন-পালন এবং হাটে গরুর ব্যবসা করতেন হাছেন আকন্দ।
পাশাপাশি সারিয়াকান্দি বাঙালি নদীর চরে বর্গা নেওয়া দেড় বিঘা জমিতে তিনি বাদাম, পিয়াজ, কলাই ও ধানের চাষাবাদ করতেন।
এরপর পরিকল্পনা করে গত পরস্পর যোগসাজশে চাষাবাদে বাধা দেওয়ার জেরে গত ৩১ অক্টোবর রাত ১০ টার দিকে সোনাতলা থানাধীন ৬ নং তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত চর সরলিয়া গ্রামের মনসুর মন্ডলের ভুট্টা ক্ষেতে হাছেন আকন্দকে কৌশলে ডেকে নিয়ে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে এবং গামর গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে শুক্কুর আলী (২২) ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হযরত আলী (২০)। এরপর তারা আত্মগোপন চলে যায়।
এই ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এলআইসির একাধিক চৌকস টিম তদন্ত শুরু করে। এতে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামী হযরত আলীকে (২০) গ্রেফতার করে সিআইডি।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বগুড়া জেলার সোনাতলা থানাধীন ৬নং তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত চর সরলিয়া গ্রাম থেকে ১ নভেম্বর সকালে মো. হাছেন আকন্দ (৪০) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সোনাতলা থানা পুলিশ। মরদেহটি ভুট্টা ক্ষেতের গামড় গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত ছিলে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের স্ত্রী মোছা. আঙ্গুর বেগম অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, এই ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে গুরুত্বের সঙ্গে সিআইডি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, কারো সাথে পারিবারিক/ব্যবসায়িক পূর্ব কোন বিরোধ ছিল কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ভুক্তভোগী পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, মৃত হাছেন আকন্দ ৩ ছেলে ও স্ত্রীসহ মোট ৫ জনের মুখের অন্ন সংস্থানের জন্য কৃষি কাজের পাশাপাশি গরুর ব্যবসা করতো। তিনি প্রায় ১০/১২ বছর যাবৎ স্থানীয় কলেজ হাট, নাটিয়ার পাড়া, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী গরুর হাটসহ বিভিন্ন গ্রাম হতে গৃহস্থের গরু ক্রয় করে নিজের বাড়িতে লালন-পালন করে বিক্রয় উপযোগী হলে বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রয় করতো। এর পাশাপাশি সারিয়াকান্দি বাঙালি নদীর চরে বর্গা নেওয়া দেড় বিঘা জমিতে সে বাদাম, পিয়াজ, কলাই ও ধান উৎপাদন করে সংসার চালাতো। ’
‘ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে শিমুলতাইড় গ্রামের জনৈক ব্যক্তি তার জমিসহ হাছেন আকন্দের জমিতে বাদাম গাছ লাগাতে থাকে। বিষয়টি ভিক্টিম হাছেন আকন্দ লোক মারফত সংবাদ পেয়ে নিজের জমির সীমানা ছাড়িয়ে তার ক্ষেতে কেন বাদাম চাষাবাদ করছে মর্মে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে। এতে উক্ত ব্যক্তি, তার ছোট ভাই শুক্কুর আলী ও প্রতিবেশী হযরত আলী ক্ষিপ্ত হয়ে হাছেন আকন্দ এর উপর মারমুখী আচরণ করে এবং জোর পূর্বক চাষাবাদ করতে থাকে। পরবর্তীতে শুক্কুর আলী (২২) ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হযরত আলী তাদের চাষাবাদে বাধা দেওয়ার কারণে ভুট্টা ক্ষেতে হাছেন আকন্দকে কৌশলে ডেকে এনে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে গামর গাছের সাথে লাশটি ঝুলিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যায়। ’
তিনি আরো বলেন, আত্মগোপনে যেয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় দিন মজুরের কাজ করতে থাকে। এলআইসির একাধিক চৌকস টিম উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামী হযরত আলীকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
এসজেএ/জেআইএম