পাথরঘাটা,(বরগুনা): কেউ কবর খননের কাজে ব্যস্ত, কেউ কেউ আড়াই বছরের শিশু তাবাসসুমের শোকে অজ্ঞান হওয়া মাকে সুস্থ করায় ব্যস্ত; বাড়ির সামনে অনেকে অপেক্ষা করছেন তাবাসসুমের জন্য। এ এক হদয়বিদারক ঘটনা।
তাবাসসুমের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রাম গিয়ে দেখা যায় অবুঝ শিশুর শোকে আর্তনাদ। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের হাফেজ তুহিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরছিলেন গ্রামে। পুরো লঞ্চ যখন আগুনে ছেয়ে যায়, তখন প্রাণ বাঁচাতে আড়াই বছরের শিশু সন্তান তাবাসসুমকে নিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে ঝাঁপ দেন নদীতে। কিন্তু তীরের লাগাম পেয়ে হুশ ফিরতেই দেখেন শিশু তাবাসসুম আর কোলে নেই। কখন মেয়ে হাত ফসকে সুগন্ধার পানিতে ভেসে নিরুদ্দেশ হয়েছে টের পাননি বাবা তুহিন। তুহিন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। দিনভর সন্তানের খোঁজে কখনো হাসপাতাল কখনো নদীতীরে ছুটে বেড়িয়েছেন হাফেজ তুহিন ও তাঁর স্ত্রী। অবশেষে শিশু তাবাসসুমের খোঁজ মেলে তবে, জীবিত নয় মৃত।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজে ‘আড়াই বছরের মেয়ে নিখোঁজ, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন মা-বাবা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আজ শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে গ্রহণ করেন বাবা নাসরুল্লাহ তুহিন।
তুহিন বলেন, ‘মোর মাইয়াডা কোল জুইরা আইয়া আবার বুকটা খালি কইরা গ্যালে। মোরা আর বাচমুনা’। তুহিন আরও বলেন, ‘আগুন থিইক্যা বাঁচতে মাইয়া কোলে লইয়া পানতে (পানিতে) লাফ দিছিলাম। পাড়ে উইঠা দেহি মোর গেদু কোলে নাই। হারা দিন বিছরাইছি কোনো হানে পাই নাই। মোরে এট্টু ওর লাশটা অইলেও আইন্না দ্যান’।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় এমভি অভিযান-১০ নামে লঞ্চে আগুন লাগে। দীর্ঘ চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ পর্যন্ত পাথরঘাটায়ই তিনজনের মরদেহ পাওয়া যায়, তারমধ্যে আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, তার বাড়ি পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে, শিশু মায়িদার (১৫) বাড়ি পাথরঘাটার চরদুয়ানি ইউনিয়নে। এছাড়া অপর শিশু তাবাসসুম পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রামে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
এএটি