চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তেমনি এক ইচ্ছা পূরণ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত কামাত গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান।
সরেজমিনে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা কামাত গ্রাম। এ গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান পেশায় কৃষক। শিশুকালে বাবাকে হারান তিনি। পরে যুদ্ধের সময় ঘরবাড়ি হারিয়ে মা, বোন ও ভাইসহ পাঁচজনকে নিয়ে যখন দিশেহারা তখন ঠাঁই হয় চাচার বাড়িতে। ২০ বছর বয়সে মায়ের চাপে বিয়ে করে সংসারের হাল ধরেন পুরোদমে। তবে লেখাপড়া করতে না পারার আক্ষেপ তার রয়ে যায়।
তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে তার সঙ্গে কাজে যোগ দেওয়ায় তিনি প্রতিজ্ঞা করেন বাকি দুই ছেলেকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি নিজে অন্তত এসএসসি পাশ করবেন। দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ছেলেদের সঙ্গে বাড়ির পাশের তেলকুপি জামিলা স্বরণি ভকেশনাল স্কুলে ভর্তি হন। অনেকের নিন্দা ও বিরুপ মন্তব্যের মধ্যেও তিনি চালিয়ে যান তারা পড়ালেখা। ৫৪ বছর বয়সে তিনি তেলকুপি জামিলা স্বরণি ভকেশনাল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে ৪.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এদিকে পাশের খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তার বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন স্থানীয়রা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি এখন ভাইরাল। তিনি এখন এলাকায় আলোচনার মূলকেন্দ্র। চলছে মিষ্টি বিতরণ। তবে যারা লেখাপড়ায় বিরোধিতা করেছিল তারা এখনও ফেসবুকে সমালোচনা করছেন।
এদিকে আব্দুল হান্নানের ভাবি জরিনা বেগম জানান, তার দেবর মাঝে মধ্যেই তার বাড়িতে নাতির বই নিতে যেতেন। অনেক সময় এ নিয়ে তাকে সমালোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত সে মনোবল হারায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার পাস করার খবর পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় আনন্দে আত্মহারা তার ছেলেরাও।
আব্দুল হান্নানের বড় ছেলে জাহিদ হাসান জনি জানান, তিনি গর্বিত যে তার বাবা নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে এসএসসি পাস করেছেন।
অপর ছেলে নাহিদ হাসান রনি জানায়, তার বাবা সংসার চালিয়ে অবসর সময়ে যদি লেখাপড়া করে পাস করতে পারে তবে তারা কেন অনুকূল পরিবেশেও লেখাপড়া করতে পারবে না? সে তার বাবার ফলাফলে উচ্ছাস প্রকাশ করে জানায়, যেকোন মূল্যে আমাকে এসএসসি পরীক্ষায় সর্ব্বোচ্চ ভাল রেজাল্ট করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষানুরাগী আব্দুল হান্নান বলেন, শিক্ষা গ্রহণে বয়স বাধা হতে পারে না। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। আর আমি এ শিক্ষা নিয়ে এলাকার গরিবদের ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা ছাড়া দেশ ও জাতি অন্ধকারে থাকবে। তাই আপনাদের ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠান। শিক্ষিতের হার বাড়লে বাড়বে দেশের নাম। আপনারা দোয়া করবেন আমার জন্য।
আর বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. কলিমুদ্দিন হোসেন জানান, আব্দুল হান্নানের পাস করার খবরে গ্রামের সুনাম বেড়েছে। তার মত বয়স্ক লোক জিপিএ ৪ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। আমার বিশ্বাস তাকে দেখে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি অন্যরাও উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ হবে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাকে ঘিরে আনন্দে বিমোহিত। তিনি প্রমাণ করলেন, শিক্ষার কোনো বয়স লাগে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
আরএ