ঢাকা: যমজ দুই ভাইকে দালালের মাধ্যমে ভাগিয়ে নিয়ে ভর্তি করা হয় আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে। ভর্তির দুদিন পর এক লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ভুক্তভোগী মা আয়েশা আক্তারের হাতে ধরিয়ে দেন হাসপাতাল মালিক গোলাম সরোয়ার।
এরপর টাকা পরিশোধ না করায় যমজ দুই ভাইয়ের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগী মাকে হাসপাতালেই শারীরিক নির্যাতন করেন এবং হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন যমজ শিশু দুটিকে রাস্তায় বের করে দেন তিনি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মা আয়েশা আক্তারের এক সন্তানের মৃত্যু হয়। মা মৃত আহমেদ (৬ মাস) ও অসুস্থ আব্দুল্লাহ (৬ মাস)কে কোলে করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে শিশু আব্দুল্লাহ চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী মায়ের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ারকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আমার বাংলাদেশ হাসাপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার (৫৭)কে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি জানায়, আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে রোগী ভর্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। এরই ধারাবাহিকতায় দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই হাসপাতালে গত ২ জানুয়ারি যমজ দুই ভাইকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়, অন্যথায় চিকিৎসা করা হবে না বলে জানানো হয়। ভুক্তভোগী মা ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তথাপি অতিরিক্ত আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে আর টাকা না দেওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ রাখা হয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে টাকা না পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যমজ দুই ভাইসহ ভুক্তভোগীদের বের করে দেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তিনি দীর্ঘ ২০-২২ বছর যাবৎ প্রায় ছয়টি (রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায়) বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিগত প্রায় এক বছর যাবৎ শ্যামলীতে বর্ণিত হাসপাতাল খুলে ব্যবসা শুরু করেন। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে এ হাসপাতালের সঙ্গে তিনি দালাল সিন্ডিকেট জড়িত করে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফুসলিয়ে বর্ণিত হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা হতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে হাসপাতালের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানায় যে, হাসপাতাল পরিচালনার বিধি মোতাবেক সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকার কথা থাকলেও সার্বক্ষণিক একজন ডিউটিরত থাকতো। হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউসহ ৩০টি বেডের প্রাধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন তার হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ অর্থাৎ চারটি আইসিইউ বেশি, তন্মধ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে দুটি। নয়টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউভেটর ছিল একটি ও ১৫টি সাধারণ বেড রয়েছে। মূলত আইসিইউ কেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে তিনি অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তার সঙ্গে জড়িত বাকি সহযোগিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২২
এসজেএ/আরবি