ঢাকা: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কাটাবাড়িতে গারো সম্প্রদায়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল সোলায়মান হোসেন রিয়াদ (২২) ও তার নয় সহযোগী।
গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে ওই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল গারো সম্প্রদায়ের স্কুল পড়ুয়া দুই কিশোরী।
এরপর দুই কিশোরীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক কিশোরীর বাবা হালুয়াঘাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (নং-২৪) দায়ের করলে প্রধান আসামি রিয়াদসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কচুয়াকুড়া গ্রামের মো. শরীফ (২০), এজাহার হোসেন (২০), কাটাবাড়ি গ্রামের রমজান আলী (২১), মো. কাউছার (২১), মো. আসাদুল (১৯), শরিফুল ইসলাম (২২), মো. মিজান (২২), মো. রুকন (২১) ও মো. মামুন (২০)।
শনিবার (০৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে গ্রেফতার হন রিয়াদ। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, রিয়াদ আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। সেগুলো সালিশি বিচারের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছিল। গারো সম্প্রদায় ও স্থানীয়রা আমাদের এসব তথ্য জানিয়েছে। ঘটনার পর রিয়াদ একটি মালবাহী ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিল। পরে গফরগাঁওয়ে আত্মগোপন করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত রিয়াদ। ১০ থেকে ১৩ জনের একটি বখাটে দলের নেতৃত্ব দিতো সে। তার কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। ছোটবেলায় তিনবছর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে রিয়াদ ও তার সহযোগীরা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিয়াদের বিরুদ্ধে হালুয়াঘাট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মাদক চোরাচালান মামলা রয়েছে। এর আগেও সে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়েছে। কারাভোগ করেছে। সে সহযোগীদের নিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যখন দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হচ্ছিল সেখানে ১০ বছরের একটি শিশু ছিল। কিন্তু ওই শিশু পালিয়ে বাড়িতে চলে যায়। ভুক্তভোগীরা প্রাথমিকভাবে বিষয়টি গোপন রাখেন। পরে গারো সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ৩০ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, রিয়াদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে তার বাবা এলাকার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। যেহেতু তার বাবা জনপ্রতিনিধি ছিলেন, সে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তদন্ত করলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
গারো সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হালুয়াঘাট সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব। তবে র্যাবের অভিযানের প্রেক্ষিতে আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণের পদক্ষেপ নিচ্ছিল বলে জানা গেছে। রিয়াদের বাকি সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস/এনএসআর