ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ

নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপজেলার আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিকার রেজিস্ট্রেশন ও সনদপত্র দেওয়ার নাম করে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, উপজেলার ১৩ হাজার ৪১০ জন শিক্ষার্থীকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকার (ফাইজার) প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয় আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার সময় যাবতীয় খরচ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫৪ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়। এই সব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষকরা টিকার রেজিস্ট্রেশন ও টিকার সনদপত্র দেওয়ার খরচ হিসেবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা আর কিছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ টাকা টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে টাকা না নেওয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। অথচ সেই নির্দেশনা না মেনেই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও টিকার জন্য অল্প বিস্তর করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানায়-টিকার সনদপত্র দেওয়ার খরচ হিসেবে তাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য এবং টিকাকেন্দ্রে যেতে যাতায়াত খরচ বাবদ ওই টাকা লাগবে বলেও শিক্ষকরা জানান। টাকা নেওয়ার পর বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও বলা হয় শিক্ষার্থীদের।

জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর জানান, পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দূরবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে টিকা গ্রহণ অনেক কষ্টসাধ্য হওয়ায় টিকা দেওয়ার জন্য আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়কে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। টিকা দেওয়া সংশ্লিষ্ট খরচ কয়েকটি স্কুল তার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা না তোলার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, টিকার রেজিস্ট্রেশন ও সনদপত্র বের করতে কিছু টাকা খরচ হয়। সেই খরচের কিছুটা দিতে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, টিকা দেওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কাউকে এক পয়সাও তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ওই কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার জন্য যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার নির্দেশে এমন জঘন্যতম কাজ করলেন সেই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খাঁন অংকুর বলেন, টিকা ও টিকা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম আমার বিভাগ সরবরাহ করবে আর কেন্দ্র নির্ধারণ ও কেন্দ্রের যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগ। ওই কেন্দ্রে আমার লোকেরা অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে টিকা দিচ্ছে। সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দিচ্ছে আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে অসৎ শিক্ষকরা টাকা নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিকা রেজিস্ট্রেশন বা টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত খরচ কিংবা ভিন্ন নামে কোনো প্রকার টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। এমন জঘন্য কাজ যারা করেছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।