ভোলা: পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়েছে ভোলার চরাঞ্চল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুদূর সাইবেরিয়া, তিব্বত ও মঙ্গলিয়া থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নিয়েছে ভোলার দ্বীপচরগুলোতে।
একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানা মেলে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য যেন মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ আর কলকাকলি শোনা যায়। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সকাল-বিকেল।
ভোলার চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলা, চর নিজাম ও মনপুরাসহ বেশ কিছু স্থানে এমন দৃশ্য দেখা যায়। একটু দূরে তাকালেই দেখা যায় দল বেঁধে সারি সারি পাখির মেলা। এখানকার অন্তত ২০টি চরে আশ্রয় নিয়েছে এসব পাখি।
অতিথি পাখিদের আগমনকে কেন্দ্র করে একদিকে বেড়েছে বনাঞ্চলের সৌন্দর্য অন্যদিকে পর্যটকরাও ছুটে আসছেন পাখি দেখতে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটকদের আগমন কিছুটা কম বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
চরাঞ্চলে বসতি নির্মাণ, চারণভূমি, খাদ্য সংকট আর শিকারিদের কারণে এ বছর পাখিদের আগমন কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পাখি শিকার বন্ধ এবং জনগণকে আরও বেশি সচেতন করা গেলে পাখিদের আগমন আরও বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য তাদের।
পাখি দেখতে আসা পর্যটক মো. হারুন বলেন, চরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় পরিযায়ী পাখি। দলবেঁধে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ শুনতে অনেক ভালো লাগে। এ কারণে অনেকেই এই চরে পাখি দেখতে ছুটে আসেন।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ঢালচর, মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চরশাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনা-গোনা। সকাল বিকেল খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় এদের। ডানা মেলে উড়ে চলা ও পাখিদের কলকাকলীতে মুখর থাকে চরগুলো।
এ বছর ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে ৫৮ প্রজাতির ৩৩ হাজার পাখি আশ্রয় নিয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। ক্লাবটি ১৯৯৬ সাল থেকে ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকায় পাখি শুমারি করে আসছে। এ বছরও ৯-১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯দিনব্যাপী পাখি শুমারি করেছে তারা।
তাদের তথ্য মতে, উপকূলে গত ২২ বছরে জলচর পাখির আগমন কমেছে ৭০ ভাগ। যা খুবই উদ্বেগজনক।
বার্ড ক্লাবের সদস্য এমএ মুহিত বলেন, পাখিদের আবাসস্থলে গরু-মহিষ এবং মানুষের বিচরণ, খাদ্য সংকট, পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত নানা কারণে পাখিদের সংখ্যা কমেছে।
তিনি বলেন, এ বছর ৫৮ প্রজাতির মোট ৩৩,০৬৪টি জলচর পাখি গণনা করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লোখযোগ্য- বৈশ্বিকভাবে বিপন্ন পাখি দেশি গাং চষা ৫৪০টি - (Indian Skimmer) এবং বাদামী মাথা গাংচিল (Brown-headed Gull)। ৪১৬২টি পাওয়া গেছে।
এদিকে উপকূলে পাখি রক্ষায় সক্রিয় রয়েছে বন বিভাগ। কুকরি, ঢালচরসহ বিভিন্ন চরে নিয়মিত টহল চলছে বলে জানিয়েছেন কুকরি-মুকরি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন।
তিনি বলেন, এবার চরে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাগম হয়েছে। পাখিদের আগমনে মুখরিত চরাঞ্চল। তবে শিকারীদের দৌরাত্ম্য নেই। আমাদের টহল এবং সোর্স রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।
বাংলাদেশ সময়:১০৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
আরএ