ঢাকা: দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১-এ বাংলাদেশের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। টানা চতুর্থবারের মতো স্কোর অপরিবর্তিত, ২৬।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বৈশ্বিকভাবে দুর্নীতির এই স্কোর প্রকাশ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ১৬ স্কোর করে আফগানিস্তান প্রথম, ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় আর ২৮ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্কোর গত বছরের চেয়ে ৩ পয়েন্ট করে কমেছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান একই রকম।
ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, তালিকায় সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্তির ক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম, যা ২০২০ এর তুলনায় একধাপ নিচে। আর সর্বনিম্ন স্কোরের হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২০ এর তুলনায় এক ধাপ ওপরে ১৩তম। একই স্কোর পেয়ে একই অবস্থানে রয়েছে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক।
সূচকে ৮৮ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে যৌথভাবে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ৮৫ পয়েন্ট পেয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও নরওয়ে এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। আর ১১ স্কোর পেয়ে ২০২১ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান। ১৩ স্কোর পেয়ে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া ও সোমালিয়া এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্কোরটা হচ্ছে মূল বিষয়। অন্য কোনো দেশ খারাপ করার কারণে আমাদের পজিশন আগের চেয়ে একধাপ এগিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্কোর আগের মতো ২৬। তাই আমাদের দুর্নীতির উন্নয়ন হয়নি। এটা হতাশা জনক। ১০ বছর ধরে প্রায় আমরা একই অবস্থানে আছি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা আফগানিস্তানের পরেই। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে। কাজেই এই স্কোর আমাদের জন্য বিব্রতকর।
তিনি বলেন, দুর্নীতির দুষ্ট চক্রের গ্রাস থেকে বের হতে পারেনি। কোভিডের সময় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থানও, বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির কারণে দুর্নীতির উন্নয়নে ঘাটতি রয়েছে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও।
১৮০টির মধ্যে ১০০টি দেশ বৈশ্বিক গড় ৪৩- এর কম স্কোর করেছে। ১৩০টি দেশের স্কোর ৫০- এর নিচে। ২০২০ এর তুলনায় স্কোর বেড়েছে ৬৫টি দেশের, ৬৬টি দেশের স্কোর কমেছে এবং ৪৮টি দেশের স্কোর অপরিবর্তিত রয়েছে। এরমধ্যে ২৭টি দেশ তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। আর গত ১০ বছরে সার্বিকভাবে ৮৩টি দেশের স্কোর কমেছে। ৮৪টি দেশের বেড়েছে এবং বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের স্কোর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টিআইবি বলছে, যেসব দেশে নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তারাই সিপিআই সূচকে কম স্কোর পেয়েছে। ২০১২ সাল থেকে বিশ্বের যে ২৩টি দেশের স্কোর কমেছে, তার ১৯টিই নাগরিক স্বাধীনতা সূচকেও কম স্কোর পেয়েছে। বিশেষ করে, ২০২০ সালে সারাবিশ্বের ৩৩১ জন মানবাধিকার কর্মী হত্যার ঘটনার ৯৮ শতাংশই এমন সব দেশে দেশে ঘটেছে, সূচকে যাদের স্কোর ৪৫- এর নিচে।
এবারের সিপিআই অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে কম ভুটানে, সূচকে ৬৮ স্কোর পেয়ে ওপর থেকে অবস্থান ২৫তম। এ অঞ্চলের আটটি দেশই এবার ২০২০ এর তুলনায় অধিক স্কোর অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ভুটান, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের অবনমন হয়েছে।
সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০ এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। '০' স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং এবং '১০০' স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি। অর্থাৎ, দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন এমন দেশগুলোতেও কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
দুর্নীতির ধারণা সূচক দেখতে ক্লিক করুন
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস