ঢাকা: সদরঘাট-গাজীপুর রুটে চলাচলরত আজমেরী গ্লোরি পরিবহনে হেলপার হিসেবে মাসখানেক ধরে চাকরি করতেন মনির হোসেন। হেলপারির অভিজ্ঞতা থেকেই মাঝে-মধ্যে বসে যেতেন চালকের আসনেও।
লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও চালকের আসনে বসে একই পরিবহনের অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিলেন। আর সে সময় দুই বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে মারা যান কিশোর রাকিবুল হাসান (১৪)।
রাজধানীর মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের দুটি বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে কিশোর রাকিবুল হাসান মৃত্যুর ঘটনায় দুই বাসচালক মনির হোসেন (২৭) ও ইমরানকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর পল্টন ও মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুটি বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে কিশোর রাকিবুল হাসান মারা যায়। সে হকার হিসেবে বাসে বাসে মাস্ক বিক্রি করতো। বাবা অসুস্থ থাকায় রাকিবুল হকারি করে এবং তার মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসারের খরচ চালাত।
দুর্ঘটনার পর ঘাতক দুই বাস রেখে চালকরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার রমনা মডেল থানায় একটি মামলা (নং-১৬) করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে পলাতক চালকদের ধরতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে দুই বাসচালককে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মনির হোসেন ৫ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত ছিলেন। গত ৩ মাস আগে দেশে ফেরেন এবং দেড়মাস আগে ঢাকাতে আসেন। প্রায় ১ মাস ধরে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের একটি বাসে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে হেলপারি শুরু করেন।
হেলপার হয়েও মাঝে-মধ্যে বাসটি চালাতেন মনির। গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে ওই বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুরের চন্দ্রার উদ্দেশ্যে চালক সুমন রওনা হয়। পথিমধ্যে সুমন গুলিস্তানে এসে মনিরকে দায়িত্ব দিয়ে নেমে যায়। মনির গাড়িটি চালিয়ে মগবাজার মোড়ে একই পরিরিবহনের অন্য একটি বাসকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গেলে মাঝখানে পিস্ট হয়ে কিশোর রাকিবুল মারা যায়।
আর গ্রেফতার ইমরান ১০-১২ বছর ধরে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের বাস চালাতেন। ঘাতক বাসটি প্রায় ২ বছর ধরে চালতেন। তিনিও একসময় হেলপার ছিলেন, তবে ৩ বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন। অথচ প্রায় ১০ বছর ধরেই লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালিয়েছেন তিনি।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আজমেরী পরিবহনের ওই বাসগুলোর প্রতিটি মালিকের কাছ থেকে দৈনিক ৩৫০০ টাকা চুক্তিতে নিয়ে পরিচালনা করেন চালকরা। দৈনিক ৩৫০০ টাকার বাইরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে বাড়তি যে টাকা থাকে তাই পান চালক। এজন্য অরিক্তি যাত্রী তোলার আশায় বেপরোয়াভাবে পথে প্রতিযোগিতা করেন তারা।
ইমরানের গাড়িটির সিরিয়াল ছিল আগে, মনিরের গাড়িটি ছিল পরে। কিন্তু সামনের স্টপেজে যে আগে যেতে পারবেন তিনি যাত্রী পাবেন সেই আশায় মনির দ্রুত গতিতে ইমরানের গাড়িটিকে ওভারটেক করতে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, মামলার আসামি হিসেবে দুই চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা যদি দেখেন এর সঙ্গে চালক সুমনও দায়ী এবং গাড়ির মালিকরা অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালাতে দিয়েছেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২
পিএম/এমএমজেড