পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় কবর থেকে ১২টি কঙ্কাল চুরির পরের দিন আবারো ১৪টি কঙ্কাল চুরির খবর পাওয়া গেছে। এ দিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে উৎসুক মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
খবর পেয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী ঘটনাস্থানে পরিদর্শন করেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের কইকিল্লা গোরস্থানে।
এই উপজেলার দুটি স্থানে পরপর দুটি ঘটনায় মুসলমান সমাজের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানান, ওই এলাকায় বুধবার সকালে কয়েকটি কুকুর একটি কবরের পাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে স্থানীয় এক ব্যক্তি কবরের পাশে গিয়ে দেখেন কবরের মাটি সরানো ও মাঝের বাঁশগুলো অন্যত্র রাখা দেখতে পান। তাৎক্ষণিক বিষয়টি লোকমুখে স্থানীয়দের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্বজনেরা ওই গোরস্থানে দাফন করা আত্মীয়দের কবর দেখতে আসেন। গোরস্থানের চারপাশে খবর নিয়ে দেখা যায় মছির উদ্দীন, আব্দুর রহমান, মাহাবুব আলম, নকিবুল, লিলিমা, আম্বিয়াসহ ১৪টি কবরের মাটি এবং বাঁশ একই কায়দায় উঠানো হয়েছে।
মৃত আব্দুর রহমানের ভাতিজা গোলাম কিবরিয়া বাদল বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা তার (আব্দুর রহমান) ও মছির উদ্দীনের কবর দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে দুটি কবর মাটি ও বাঁশ সরিয়ে তাদের কঙ্কাল নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামকে জানানো হয়।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও মোজাফফর বাংলানিউজকে বলেন, পরপর দু’দিনে ঘটনায় এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এভাবে চলতে থাকলে আমরা আমাদের স্বজনদের কিভাবে দাফন করবো। আমরা প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি।
সাকোয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সায়েদ জাহাঙ্গীর হাসান সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, খবর শুনে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। কিছু কবরের মাটি ও বাঁশ বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেছে। প্রকৃত ঘটনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে একটি পাঁকা কবরের দুটি কম্বল পাওয়া গেছে।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থানে আসি। এই ঘটনাটি অনেকদিন হতে চলে আসছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতদের ধরতে সোর্স লাগানো হয়েছে। প্রয়োজনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর সে কারণে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে গোরস্থান কমিটিকে আইনের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করলে ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিলে কবরের কি অবস্থা তা জানা যাবে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) একই উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের একটি পুরাতন কবরস্থান থেকে ১২টি মরদেহ চুরি যাওয়ার অভিযোগ করে স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
এনটি