পিরোজপুর: পিরোজপুরের কাউখালীতে নামে-বেনামে বন্দোবস্তর মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত ভূমিহীনরা।
এতে উল্লেখ করেন, উপজেলা সদরের মূল্যবান খাস জমি এলাকার প্রকৃত ভূমিহীনরা না পেয়ে তা
পাচ্ছেন সরকারি চাকরীজীবী, প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। আর ওই সব জমি উপজেলা সদরের আশেপাশে থাকা অতি মূল্যবান খাস জমি।
অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, কাউখালী উপজেলার বন্দোবস্তকৃত কৃষি খাস জমির পরিমাণ রয়েছে ২৬২.১২ একর। যা ১৪৫৮ জন উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে বন্দোবস্ত হিসাবে বন্টন করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ওই সব জমি প্রকৃত ভূমিহীনদের দেয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, বিত্তবান ও প্রতিষ্ঠিত ধনীদের।
জানা যায়, উপজেলা সদরের সরকারি কাউখালী কলেজের প্রভাষক সম্পা সাহা এবং তার স্বামী স্থানীয় প্রভাবশালী প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার তিতাস মণ্ডলের নামে পৃথকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি।
তবে তিতাস মণ্ডল জানান, তিনি এ জমির জন্য প্রায় ৭-৮ বছর আগে আবেদন করেছিলেন। এছাড়া ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) জাহিদুল ইসলাম রানার বাবা উপজেলা সদরের প্রতিষ্ঠিত বেকারি ব্যবসায়ী আ. রহিম খন্দকারের স্ত্রী রানু বেগমের নামে উপজেলার সুবিদপুর এলাকা থেকে দেওয়া হয়েছে ১০ শতাংশ জমি। এ ব্যাপারে রহিম খন্দকার তার স্ত্রীর নামে ওই জমি থাকার তথ্য স্বীকার করেন। আর ওই জমি পেতে ছেলে রানার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ স্থানীয়দের।
এছাড়া উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাজারের মো. শাহ আলম এর ছেলে শাসক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা মো. বশির উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া এলাকার ২৬৩ নম্বর দাগের মূল্যবান দশ শতাংশ জমি। খাস জমি পাওয়া বশির উদ্দিনের রয়েছে উপজেলা সদরের দ্বিতল বড় পাকা ভবন। তবে তিনি নিজের নামে কোন জমি না থাকার কথা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাস জমি বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশদের রয়েছে পাকা বাড়ি বা বহুতল ভবন।
ওই মুক্তিযোদ্ধা আরো জানান, তার বাসার সামনে রাস্তার পশ্চিম পাশে চিরাপাড়া টেম্পু স্ট্যান্ডে সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে একটি সুদৃশ্য আধুনিক ভবন তৈরি করেছেন বন বিভাগে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম মীর। এই ভবন ছাড়াও আরো পাকা ভবন এবং সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়া আছে তার নামে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি চট্টগ্রাম অঞ্চলে বনবিভাগের চাকরিতে আছি। লোন নিয়ে ওই জমিতে মার্কেট করেছি। এলাকার কিছু শত্রুরা আমাকে ক্ষতি করতে সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য দিচ্ছে। এছাড়া উপজেলার চিরাপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য একই পরিবারের মৃত বশির উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা বেগম, তার ছেলে মো. মামুন মোড়ল, মো. জাকির হোসেন মোড়ল, খোকন মোড়ল ও কন্যা তারতিলা খানম নামে ধনার্ঢ্য একই পরিবারের ৫ সদস্যকে পৃথকভাবে দেওয়া হয়েছে অতিমূল্যবান ওই সব খাস জমি।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাত আরা তিথি জানান, ওই সব জমি আমার সময়ের আগে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তাই বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে এমন অনিয়মের বিষয়ে এক মুক্তিযোদ্ধা একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। তা এখনো হাতে পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এনটি