ঢাকা: বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমালোচনা করে একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে সার্চ কমিটিতে আমলা নির্ভরতাকে তারা সমালোচনা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন পাসের আগে এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এ সমালোচনা করেন।
জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। সেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাম সবাই মিলে তিন জোট জামায়াতের দেওয়া এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। এটি একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা। দেরিতে হলেও আইনটি হচ্ছে। অনেকে আইনটিকে তড়িঘড়ির কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে তো বলা হয়েছিল ১৫ দিনে এই আইন করা সম্ভব। তাহলে কে তড়িঘড়ির প্রশ্ন আসছে কেন? আমাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা না আসা পর্যন্ত আইন করে কিছু হবে না। সার্চ কমিটির সদস্য সংসদ থেকে এলে বিতর্ক হতো না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশে কী বিচারপতি ও আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মত কেউ নেই? রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের কী বিশ্বাস করা যায় না? আওয়ামী লীগ এত বড় রাজনৈতিক দল, বলেন আপনাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে হয়নি। তাহলে আপনারাও কেন বিচারপতি ও আমলার ওপর নির্ভর করবেন? চুন্নু তার বক্তব্যে স্পিকারের মাধ্যমে মনোনয়নে দুইজন সংসদ সদস্যকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন। যে আমলা এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে আরামে চাকরি করেছেন, পরে চাকরি শেষে আবার পাঁচ বছরের জন্য সিইসি হয়েছেন। তারা এই সংসদের সমালোচনা করেন। তারা ওপরেরটা খান নিচেরটাও খান।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে এই আইন করা হলে তা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। এই আইনে প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির সদস্য নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার বিধান যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে ‘শ্যাল’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই কাজ করতে হবে। আইনে না থাকলেও যেটা হবে তা হলো, অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। সে প্যানেল যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি পাঁচজন নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। তবে এটা যে অসাংবিধানিক তা নয়। সংবিধান সংশোধন না করে এই আইনটি পাস হলে তা অসাংবিধানিক হবে। এই আইনের বিষয়ে অংশীজনের সাথে কোন আলোচনা হয়নি।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই আইনের বিষয়ে মানুষের কৌতুহল রয়েছে। সকলে এটা নিয়ে কথা বলছেন। এই আইনটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সাথে আলোচনা করলে আরো সমৃদ্ধ হতো। এই আইনে বিগত দুটি কমিশনকে যে হেফাজত দেওয়া হয়েছে এটার দরকার ছিলো না। এখানে তত্ত্বাধবায়ক সরকার আনার কথা বলে বিএনপি কোন পাগল আর কোন শিশুকে আনতে চান সেটা বুঝতে পারছি না।
রওশন আরা মান্নান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার এই আইনটি করছে। কিন্তু সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ রেখে কিভাবে আইনটি হবে জানি না। আলোচনা ছাড়া তাড়াহুড়া করে আইনটি পাস করলে দেশে আবারো অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আশ করবো স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বজায় রেখে সরকার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠন করবেন। তাহলে দেশটি শান্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এসকে