নওগাঁ: ঢাকার রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুন্যে ভাসছেন ইরা। এমন ছবি এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।
চার বোনের মধ্যে ইরা তৃতীয়। বড় দুই বোন আলাদা প্রতিভার অধিকারী। ইরা নওগাঁ সীমান্ত পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫। এখন পড়ছেন নওগাঁ সরকারি কলেজে। ইরার বাবা স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী। মফস্বল শহরে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে পড়ালেখা ও অনুশীলন করে সাফল্য এনেছেন অনেক।
চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি ফ্রিল্যান্সার জয়িতার ক্যামেরায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুন্যে ভাসর এমন ছবি তোলা হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতারাতিই হয় ভাইরাল। নাচের এই ধরনকে বলা হয় ব্যালে। ব্যালে-জিমন্যাস্টিক মিলিয়ে পারফর্ম করেন নওগাঁর শিল্পী ‘মুবাশশীরা কামাল ইরা’।
মুবাশশীরা কামাল ইরা বাংলানিউজকে বলেন, নাচ আমার জীবনের পছন্দের একটা অনুশীলন। এই নাচের জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি এবং এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছি। জানি না আল্লাহ আমার কপালে কী রেখেছে। তবে নাচের মধ্যে দিয়েই আমি কিছু করতে চাই। সামনে নাচ নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে আসে। সেটা যদি দেশের বাহিরে হয় তাহলে তো ভাল হয়।
ইরা আরও জানান, ২০১৭ সাল থেকে ইউটিউব দেখে এই ব্যালে নাচ শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে বাসায় অনুশীলন করতে থাকি। প্রথম দিকে অনেক কঠিন হলেও এখন মোটামুটি নাচের সকল স্টেপ আয়ত্ত করতে পেরেছি। তবে আরও বেশকিছু ধাপ রয়েছে ইনশাআল্লাহ সেগুলো শেষ করব। দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি এই ব্যালে নাচে নতুন কিছু করার ইচ্ছে আছে।
ইরার মা ফাহমিদা কামাল বাংলানিউজকে জানান, ছোট বেলা থেকেই নাচ করতে ভালোবাসে ইরা। নাচের প্রথম হাতে খড়ি নওগাঁর স্থানীয় সুলতান মাহমুদের কাছে থেকে। এরপর ঢাকায় ভরতনাট্যম শেখেন নাচ। ২০২১ থেকে সাধনা’র সঙ্গে কাজ করছেন ইরা। পড়ালেখা আর নাচের পাশাপাশি জিম, স্কেটিং, টেনিস ও ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন ইরা। তবে প্রথম দিকে ইরার নাচ নিয়ে পরিবার থেকে কারো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। একমাত্র আমিও তাকে সাপোর্ট দিয়ে এ পর্যন্ত এনেছি। অবশ্য এখন মোটামুটি সবাই তাকে নাচের বিষয়ে সহযোগিতা করবো।
ইরার মা আরও জানান, মেয়ের এই শখের নাচের বিশেষ ধরনের জুতা এখনো কিনে দিতে পারিনি। বাংলাদেশে সচরাচর এই জুতা পাওয়া যায় না। তাইতো খালি পায়ে অনেক কষ্টে এই ব্যালে নাচ করে ইরা। তবে মেয়েকে নিয়ে অনেক আশা। দেশের পাশাপাশি বিদেশে সুনাম পাবে ইরা।
ইরার বাবা আবু হায়াৎ মোহম্মদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইচ্ছে নাচের পাশাপাশি মেয়ে লেখাপড়া শেষে বিসিএস ক্যাডার হবে। আমি আশা রাখি আমার মেয়ে অবশ্যই সফল হবে। কারণ ইরার ইচ্ছে শক্তি অনেক। সে ছোট বেলা থেকেই যা করার ইচ্ছে করে সেটিই করে দেখাই। মেয়েকে নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী।
অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সার জয়িতা আফরিন ভাইরাল হওয়া এই ছবি নিয়ে তার ফেসবুকে লিখেন, সবাই যখন শুধু সাফল্য দেখছে ও অভিনন্দন জানাচ্ছে আমাকে, কিন্তু এর পেছনে আমার যুদ্ধের গল্প হয়তো অনেকেই জানেন না। ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে অনেক গল্প, প্রশংসা, মিম সবকিছুতে ফেসবুকে অনেক পোস্ট। আমি এই সাফল্য উৎসর্গ করলাম সব ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য। কারণ আমি নিজে গত বছর থেকে এই ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। কেমোথেরাপি নিয়ে কাজ চালিয়ে গেছি। এমনকি এখনো আমার ইমিউনোথেরাপি চলছে। ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া না বরং নতুন একটা জীবনের শুরুও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এনটি