ঢাকা: ডাচ বাংলা ব্যাংকে (ডিবিবিএল) চাকরির সুবাদে সার্ভার থেকে বিভিন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন জাকির হোসেন। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএস'র মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন তিনি।
সে অনুযায়ী রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার ডিবিবিএল শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা টান্সফারের আবেদন করেন। শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়ালটন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পরে ওয়ালটন থেকে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে বলা হয় তারা টাকা টান্সফারের আবেদন করেননি। এ বিষয়ে ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা টান্সফারের চেষ্টা করা প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. জাকির হোসেন (৩৫), ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান ওরফে সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো.আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভুইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)।
এর মধ্যে জাকির হোসেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখায় এসএমই সেলস্ টিম ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আছেন।
পুলিশ জানায়, ২৫ জানুয়ারি সকালে চক্রটি ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বিডি লি. নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় থাকা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য দুইটি ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ফরম জমা দেওয়া হয়। তখন ডিবিবিএল ব্যাংকের ম্যানেজারের বিষয়টি সন্দেহ হলে তিনি ওয়ালটন গ্রুপকে জানান।
তাৎক্ষণিক ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। পরে তারা যাচাই করে দেখেন আবেদনটি একটি প্রতারক চক্র করেছে। তখন তারা টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করেন।
চক্রের মূলহোতা জাকির হোসেন উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডিবিবিএল-এ চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন জাকির। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএস'র মাধ্যমে টাকা টান্সফারের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার পর জাকির ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির কাজ দেন।
পরে ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট এন আই কর্পোরেশন, বিডি লি. নামে এবি ব্যাংক লি. মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য আসামিদের সহায়তা নেন।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন দিন ধরে ডিবিবিএল'র সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।
এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো.আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। এই চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
চক্রটি দুইভাবে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রানস্ফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। অন্যদিকে চক্রটির আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা দেবে সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
চক্রটি এরকম জালিয়াতি আরও করেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকা তারা ট্রানস্ফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে তারা এমন ট্রান্সফার করেছি কিনা আমরা জানিনা। গ্রেফতারদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে বড় অ্যামাউন্ট ট্রানস্ফার হলে যেন তাড়াতাড়ি বুঝতে না পারে। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশাল অংকের টাকা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
পিএম/এসআইএস