কুষ্টিয়া: আশ্রয়ন প্রকল্পে পাকা দুই রুমের বাড়ি পেয়েছেন আব্দুল মান্নান (৭০) নামে এক বৃদ্ধ দম্পতি। সেই বাড়ির টিনের চাল ব্যবহার করে সবজি চাষ করছেন তারা।
বাড়ির এক টুকরো উঠানও যেন সবজির বাগান। রয়েছে লালশাক, পালংশাক, মুলা, টমেটো, পেঁয়াজ। ঘরের পাশের ছায়া স্থানে মানকচু। ফলে আব্দুল মান্নানের দুজনের সংসারে কেনা লাগছে না বাড়তি সবজি। চালে উৎপাদিত শিম বিক্রিও করছেন বাজারে। ফলে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা।
স্ত্রী রাবেয়া খাতুন স্বামীর সঙ্গে এসব সবজি গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি পালন করছেন মুরগিও। এমনটাই দেখা মেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলার সদ্য উদ্বোধনকৃত আশ্রয়নের বাড়িতে।
ভূমি ও ঘরহীন আব্দুল মান্নান পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমি ও ঘর। সেখানেই এসব চাষ করেন তিনি। অল্প জমিতেই এসব চাষ করে সংসারে এনেছেন সুখ। ওই বৃদ্ধ দম্পতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন সরকারের প্রতি।
আমলা আশ্রয়ন প্রকল্পের ১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান। তার সবজি চাষাবাদ দেখে আশ্রয়নের অন্যরাও চাষ শুরু করেছেন।
আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, জমি ও ঘর কোনোটাই ছিল না। ক্যানেলের ধারে কুঁড়ে ঘরে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে আমাকে পাকা ঘর দিয়েছেন। দিয়েছেন জমিও। পাকা ঘরে থাকার সাধ থাকলেও সম্ভব ছিল না। বুড়ো বয়সে এসে ঘর পেয়ে সেই আশা পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ কিছুদিন আগে আমাদের এখানে আসেন। তিনি আমাদের পরামর্শ দেন অল্প জমিতে কিভাবে শাক সবজি উৎপাদন করা যায়। আশ্রয়নের সবাইকে তিনি বিনামূল্যে লালশাক, পালংশাক, কলমি শাক, লাউ, কুমড়া, চিচিংগা, ঢেঁড়স, মুলা, টমোটোসহ বিভিন্ন সবজির বীজ দেন। সেইসঙ্গে কোথায় কি চাষ করলে ভালো হয় সেটা সম্পর্কেও জানান।
আব্দুল মান্নান আরও বলেন, আমি ঘরের পাশে এক কোনে তিনটা শিম গাছ এবং কয়েকটা লাউ গাছ লাগিয়েছিলাম। শিম গাছগুলো বেশ ভালো হয়েছে। পুরো চাল জুড়েই শিম গাছের লতা। ইরা জাতের এ শিম প্রচুর পরিমাণে থোকায় থোকায় ধরে। একটা গাছ থেকে বেশ কয়েকবার শিম তোলা যায়। একবারে প্রায় ৪০-৫০ কেজি করে শিম পাওয়া যায়। ৪-৫দিন পর পর শিম তোলা যায়। এখন যে শিম রয়েছে তাতে প্রায় ১শ কেজি শিম পাওয়া যাবে। শিম বড় হয়েছে আবারও ফুল এসেছে।
তিনি বলেন, শিমের পাশাপাশি একই চালে চাল কুমড়া ও লাউ রয়েছে। ঘরের সামনে ছোট সবজি বাগানে রয়েছে লালশাক, পালংশাক, মুলা, টমেটো, পেঁয়াজ।
পরিবারের সবজি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান বলেন, অল্প জমিতে এসব সবজি চাষ করে নিজেদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করছেন।
আব্দুল মান্নানের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানান, আশ্রয়নে ঘর পাওয়ার পর এখানে এসে মুরগি পালন করি। বর্তমানে বাচ্চাসহ ১৫টা মুরগি রয়েছে। এই মুরগি থেকে ডিমও পাই। এছাড়া অনেক সময় মুরগিও বিক্রি করি।
আশ্রয়নের ৪ নম্বর ঘরের রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে বিনামূলে জমি ঘর পেয়েছি। কিছুদিন আগে কৃষি অফিসার এসে সবজির বীজ দিয়েছিলেন। আমি ঘরের চালে হাজারি লাউ চাষ করেছি। সেইসঙ্গে ঝিঙ্গা ও করলা। পাশের স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে মানকচু লাগিয়েছি। টিনের চালে বেশ ভালো লাউ ধরছে। যা নিজেরা খাচ্ছি এবং বিক্রি করতে পারছি।
আব্দুল মান্নান, রফিকুল ইসলামের মতো আমলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮ ঘরের মধ্যে ৬ ঘরের লোকই করছে এসব চাষাবাদ করছে। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শ ও দেওয়া বীজে টিনের চাল, পতিত জমিতে এসব চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আশপাশের মানুষকে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে আমরা চাই বসতবাড়ির আঙিনায় পতিত জমির উত্তম ব্যবহার। বসতবাড়িতে যেসব সবজি হয় আমলা আশ্রয়ন প্রকল্পে আমরা সে সব সবজির বীজ বিনামূল্যে দিয়েছি যাতে তারা এসব চাষে উদ্বুদ্ধ হয় এবং তাদের দেখে অন্যরা বাড়ির আঙিনার সঠিক ব্যবহার করে।
তিনি আরও জানান, বসতবাড়িতে এমন সবজি চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও তারা লাভবান হন। এছাড়া বসতবাড়িতে উদপাদিত সবজি বীষমুক্ত ও নিরাপদ।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, ভূমিহীন অসহায় মানুষদের সরকার বিনামূল্যে জমি ও ঘর দিয়েছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। মিরপুর উপজেলার আমলা আশ্রয়ন প্রকল্পে সঠিকভাবে ঘরের আশেপাশে এমন চাষাবাদ করেছেন অনেকেই। এটা প্রশংসনীয়, প্রতিটি বাড়িতেই এমন চাষাবাদ করলে পরিবারের সবজির যোগান দেওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
আরএ