ঢাকা: সাংবাদিক হাবীবুর রহমান হাবীব মিষ্টভাষী ছিলেন। এই ছেলেটা এইভাবে চলে যাবে ভাবিনি।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সাংবাদিক হাবীবুর রহমানের অকাল মৃত্যুতে আয়োজিত শোকসভায় তিনি একথা বলেন। শোকসভাটির আয়োজন করে ডিআরইউ।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, হাবীবের মৃত্যু নিয়ে তদন্তটা দ্রুত হওয়া উচিত। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবো। তারা যেন বিচারিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। রিপোর্ট আশার পর দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাইলেও এখন হাবীবের জন্য কিছু করতে পারবো না। তাই এখন সবাইকে হাবীবের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হাবীবের সহকর্মীদের যে আন্তরিক দেখলাম তাতে আমাকে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। আপনারা হতাশ হবেন না, জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক বান্ধব। তিনি সময় পেলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন। আমরা হাবীবের স্ত্রী ও ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। একই সঙ্গে হাবীবের পরিবার যাতে দ্রুত আর্থিক সহায়তা পায় সেই ব্যাপারে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি।
শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউ’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ডিআরইউ’র পক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করবো হাবীবের পরিবারের পাশে থাকতে। আমি আশা করবো ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিএফইউজে পক্ষ থেকে একটি ফান্ড তারা ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে হাবীবের স্ত্রী ও তার ছোট ভাইয়ের চাকরির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা হাবীবের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করছিলাম যারা তদন্ত করছেন এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি। হাবীবের মৃত্যুটা কীভাবে হয়েছে আমরা তার মৃত্যু বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে দেখতে চাই।
শোকসভায় হাবীবের বাবা বলেন, আমার বলার ভাষা নেই। আপনাদের সঙ্গে চলায় আমার ছেলে কোনো বেয়াদবি করে থাকলে মাফ করবেন। বাবা হয়ে ছেলের লাশ কাঁধে নেওয়া যে কী বেদনার এটা বলে বোঝানো যাবে না। তবে আমার ছেলের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
ঢাবি অধ্যাপক আবুল মনসুর বলেন, একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রের জন্য শোকসভা স্মৃতিচারণ করা সত্যি বেদনাদায়ক। হাবিব সব সময় সত্যকে তুলে ধরেছেন। আমি আশা করবো আগামীতে সব সাংবাদিক সংগঠন তার পরিবারের পাশে থাকবেন।
সাংবাদিক শাহজাহান সরদার বলেন, নিজেদের মধ্যে নিজেদের সমালোচনা বন্ধ করতে হবে। তবে রিপোর্ট করতে গিয়ে কোনো নেতার লেজুড় হবেন না। হাবীবের পরিবার যাতে ভালোভাবে চলতে পারে সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, হাবীব বিনয়ী ছিল, তার মধ্যে নেতৃত্বের একটি আকাঙক্ষা ছিল। তবে হাবীবের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া উচিত। সাংবাদিকদের বেলায় কেন রিপোর্টগুলো আসে না। এটি যেন সাগর-রুনির মতো না হয়।
এ সময় হাবীবের স্ত্রী হাসি বলেন, হাবীবের মৃত্যু নিয়ে যে ধোঁয়াশা এটা নিয়ে আমার একার পক্ষে কিছু করার নেই। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। হাবীব নেই বিশ্বাস করতে পারি না, হাবীবকে কেউ ভুলে যাবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন বলেন, হাবীবের পাশে আমরা সবাই থাকবো। গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ একটি পরিবার সবসময় সবার পাশে থাকে তার পাশেও থাকবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, এ ঘটনা নিয়ে কিছু কথা এসেছে। আমরা চাই এটার সুষ্ঠু তদন্ত। আমরা জানতে চাই হাবীবের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু।
ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, হাবীবের মৃত্যুর জন্য স্বাভাবিক দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু আমরা এ রহস্যর উদঘাটন চাই।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, হাবীবের মৃত্যুর খবরে আমি হতবাক হই। তার অকাল মৃত্যু কখনই প্রত্যাশা ছিল না।
ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, হাবীবকে ভালো রাখতে হলে তার পরিবারকে ভালো রাখতে হবে। আর এ চেষ্টাটুকু আমাদের করতে হবে।
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, সহকর্মীর প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে হবে। হাবীব একজন বিনয়ী মানুষ ছিলেন। আমরা একসঙ্গে আওয়ামী লীগ বিট কাভার করতাম, তার মৃত্যুতে শোক জানানোর ভাষা নেই। আমি চাই তার স্ত্রীর একটি চাকরির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তার পরিবারের পাশে থাকতে।
শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, মশিউর রহমান, ডিআরইউ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ শারমীন ও অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম।
সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এসএমএকে/আরআইএস