বরগুনা: আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। বাবা ও মা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।
গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে তালতলী থানা পুলিশ উপজেলার শিকারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মোল্লার বসতঘর থেকে তার মেয়ে ও তালতলী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ সময় পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। ওই ঘটনার পর থেকে প্রেমিক কাইয়ুম পলাতক রয়েছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তালতলী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমার একই গ্রামের হাফিজুর রহমান হাওলাদারের ছেলে কাইয়ুমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি উভয় পরিবার জানতে পেরে ওই সম্পর্ক ভেঙে দিতে তাদের চাপ দেয়। কিন্তু ওই সম্পর্ক না ভাঙতে এবং ওই ছেলেকে বিয়ে করতে অনড় থাকেন রুমা।
এদিকে রুমাকে বিয়ে দিতে পরিবারের লোকজন উঠেপড়ে লাগে। শনিবার বিকেলে রুমার জন্য পাত্র দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি রুমা। ওইদিন সকালে প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়িতে ফিরে রুমা বাবা মায়ের সঙ্গে ভাত খায়। কিছুক্ষণ পরে রুমার বাবা-মা মাঠে ধান শুকানোর কাজে চলে যান। ওই সুযোগে সুইসাইড নোট লিখে রুমা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দেন। বাবা-মা মাঠ থেকে ফিরে এসে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে মেয়েকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন তারা বসতঘরের দোতলায় রুমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ ও একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওইদিন বিকেলে পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠায়।
সুইসাইড নোটে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। বাবা-মা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি কাইয়ুমকে ভালোবাসি, আমাদের প্রেম খাঁটি ছিলো। শুধু একদিন বাজার থেকে গাড়িতে করে বাড়িতে আসার পথে আমি কাইয়ুমের হাত ধরেছি। এছাড়া আমাদের ভেতরে আর কোনো সর্ম্পক হয়নি। ভালো থেকো বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
স্থানীয়রা জানায়, কলেজ শিক্ষার্থী রুমা একই গ্রামের কাইয়ুম নামের একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম করে আসছিল। ওই সম্পর্ক উভয় পরিবার মেনে নেয়নি। রুমার পরিবার অন্য একটি ছেলের সঙ্গে রুমাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে অভিমান করে রুমা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
নিহত রুমার বাবা আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, আমার মেয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। কেন করেছে তা আমি জানি না?
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু মোবাইল ফোনে বলেন, প্রেমের সর্ম্পকের কারণে রুমা নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত্যুর আগে ওই মেয়ের লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নোটে সে মৃত্যুর কারণ লিখে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
আরএ