ঢাকা : রাজধানীর মার্কেটগুলোয় ঈদুল আযহার কেনাকাটা জমে না উঠলেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ফুটপাতের দোকানগুলোয়। বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বসেছে কাপড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন নিত্য-পণ্যের পসরা।
সোমবার (৪ জুলাই) সরেজমিনে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতগুলোয় বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
মূলত, মার্কেটের তুলনায় কম দামে বাহারি পণ্য মেলে এসব ফুটপাতে। এতে আকৃষ্ট হন ক্রেতারা। বিক্রেতারাও অভিনব পণ্য ও বিক্রয় কৌশল নিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন।
নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচের ফুটপাতে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা জিহাদ। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি ছোট চাকরি করেন। বৌ-বাচ্চা নিয়ে থাকেন। ঈদুল ফিতরে স্ত্রী ও বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনতে পারেননি। তাই এবার কেনাকাটা করেছেন। বড় মেয়ের জন্য ফ্রক নিয়েছেন। আর কি কিনবেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী জিহান টি-শার্ট দেখছিলেন দুই বন্ধুসহ। জানালেন, ফুটপাতে কম দামে ভালো পণ্য পাওয়া যায়। অথচ, একই পণ্য মার্কেটে গেলে দুই থেকে তিনগুণ দামে কিনতে হয়। তাই ফুটপাতই তাদের ভরসা।
গাউছিয়া মার্কেটের সামনে জুতা পছন্দ করছিলেন আদিবা নিশার মিলকী নামের এক শিক্ষার্থী। সঙ্গে ছোট বোন। তিনি বলেন, এখানে অনেক সুন্দর ডিজাইনের জুতা কম দামে পাওয়া যায়, তাই নিচ্ছি। আমার জুতো কয়দিন পর-পর লাগে। মার্কেট থেকে কিনে পোষায় না।
ঢাকা কলেজের উল্টো পাশের ফুটপাতে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে নিজের জন্য একটি শার্ট বাছাই করেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী হান্নান। শার্ট খুঁজে পেলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব সময় ফুটপাতে ভালো জিনিস মেলে না। ২-৩ দিন পর বেতন পাব। তখন এসে নিয়ে যাব পছন্দ করে।
প্রায় প্রতিটি ফুটপাতের দোকানের চিত্রই একই রকম। কেউ জামা-জুতা, কেউ প্লাস্টিকের পণ্য কিনছে। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের মধ্যেই এসব দোকানের ক্রেতা বেশি। বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিছানার চাদর-পর্দার দোকানও বসে। অনেকে থ্রি-পিচের পসরা বসান। ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চবিত্তরাও এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করেন।
ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতের জুতো দোকানি মো. হারুণ বাংলা নিউজকে বলেন, প্রতিদিনই বেচা-কেনা হয়। ঈদ আসায় এখন বেচাকেনা ভালো। দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিকিকিনি হয় তার দোকানে।
নিউমার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে কাপড়ের দোকান দিয়েছেন জহির। তার দোকানে ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, টি-শার্ট বিক্রি হয়। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিক্রি ভালো হচ্ছে। দৈনিক ৮-১০ হাজার টাকার মতো এখন বিক্রি করছেন।
ফুটপাতে যে হারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সে হারে বিক্রি নেই মার্কেটগুলোর দোকানে। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা আসছেন, যে যার মতো পণ্য দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রি হচ্ছে না, তেমন না। কিন্তু ঈদের বাজার হিসেব করে যে বিক্রি, তেমনটা নেই। কোরবানির ঈদে বেচা-বিক্রি তেমন হয় না বলে জানালেন দোকানিরা।
সামগ্রিকভাবে দুই মাধ্যমের দোকানিরা ঈদকে নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঈদের দিন যত কমবে তত বিক্রি বাড়বে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে ঈদের কেনাকাটা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ৪ জুলাই, ২০২২
এমকে/এমজে