ঢাকা: কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে পাঠানোর জন্য কাভার্ডভ্যানে তোলা হচ্ছিল কেমিক্যালের ড্রাম। ড্রামে কেমিক্যাল থাকলেও স্বাভাবিক পণ্যের মতোই শ্রমিকদের দিয়ে কাভার্ডভ্যান লোড করা হচ্ছিল।
মেট্রো এক্সপ্রেস নামে ওই কুরিয়ার সার্ভিসটি শ্রমিকদের জানায়নি ড্রামে কেমিক্যাল আছে। কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ম-নীতি না মানা এবং তথ্য গোপণের মতো অবহেলার কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে হাজারীবাগ থানাধীন বউবাজার এলাকায় মালামাল লোড করার সময় বিস্ফোরণ হয়। এতে ইলিয়াস হোসেন (২০) নামে একজন মারা যান।
এছাড়া মো. হালিম (৪০), দিলীপ (২৮) ও মার্সেল (৩৬) নামে আরও তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে হালিমের ৫০ শতাংশ, দিলীপের ১৮ শতাংশ ও মার্সেলের শরীরের পাঁচ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গোডাউন থেকে মেট্রো এক্সপ্রেস নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ডভ্যানে ২০ লিটার ক্যানে ভর্তি ব্যাটারি তৈরির তরল পদার্থ লোড করছিলেন শ্রমিকরা। তখনই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত ও তিন শ্রমিক দগ্ধ হন। বিস্ফোরণে গাড়ির পেছনের কিছু অংশ এবং গোডাউনের সামনের অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিস্ফোরণ হওয়া ড্রামে কেমিক্যাল ছিল বলেও নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে কী ধরনের কেমিক্যাল ছিল, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তারা।
আহতরা জানান, কেমিক্যালের ড্রাম চট্টগ্রামে নেওয়ার জন্য মেট্রো এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করছিল একটি কোম্পানি। তারা বিভিন্ন পণ্যের নাম ব্যবহার করে এই কেমিক্যাল সরবরাহ করেন। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসে কেমিক্যাল সরবরাহের বিষয়ে শ্রমিকদের না জানিয়েই লোড করতে বলা হয়েছিল।
আহত মার্সেল জানান, তিনি মেট্রো এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের মালামাল লোড-আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুরিয়ারের কাভার্ডভ্যান এলে মালামাল লোড করতে থাকেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তার দুই পা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়।
তিনি বলেন, আমরা জানতাম না ওই ড্রামে কেমিক্যাল রয়েছে। আমাদের না জানিয়ে এই মালামাল লোড-আনলোড করিয়েছে কুরিয়ার কর্তৃপক্ষ। কেমিক্যাল আছে জানলে আমরা সাবধানে কাজ করতাম। মালামাল লোড-আনলোডের সময় কেমিক্যালের ড্রামে নাড়াচাড়া হয়ে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।
জানা যায়, ওই কুরিয়ার সার্ভিসের ট্রাকটি গুলশান থেকে হাজারীবাগের বউবাজার এলাকায় আসে। সেখানে কেমিক্যালের ড্রামগুলো লোড হওয়ার পর চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল।
এমনকি মেট্রো এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের সুপারভাইজার মো. সোহাগও কেমিক্যালের বিষয়টি জানতেন না। তিনি বলেন, ড্রামে যে কেমিক্যাল ছিল সেটা আমাদের জানতাম না। যেখান থেকে এই কেমিক্যালের ড্রাম নেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা তদন্ত করছি।
ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই ইমদাদুল হক শাহীন বলেন, কেমিক্যাল বিস্ফোরণের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখানে কুরিয়ার সার্ভিসের অবহেলা এবং যে প্রতিষ্ঠানের কেমিক্যাল ছিল, তাদের অবহেলা ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
পিএম/এমএমজেড