ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হত্যা নয়, পানিতে ডুবেই দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
হত্যা নয়, পানিতে ডুবেই দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু  ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের ব্রিফিং

ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব (৫১) বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারাপারের সময় লঞ্চের ধাক্কায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

কোনো ব্যক্তি বিপ্লবকে হত্যার জন্য সেখানে গিয়েছেন কিংবা তাকে হত্যার জন্য কেউ অনুসরণ করেছেন এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

পানিতে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

বিপ্লবকে বহনকারী খেয়া নৌকায় ধাক্কা দেওয়া মর্নিং সান-৫ লঞ্জের ৬ জনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে কেরানীগঞ্জ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- লঞ্চের প্রথম মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান (৩৮), দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন (৩৫), ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা (৩৮), দ্বিতীয় ইঞ্জিন ড্রাইভার ইমন হোসেন (২৩), সুকানী বা লঞ্চের চালক মো. সালমান (২১) ও সুপারভাইজার ইব্রাহিম খলিল (২৯)।

রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর দুরন্ত বিপ্লব কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকা থেকে জিঞ্জিরা-সোয়ারিঘাট হয়ে ঢাকা আসার পথে নিখোঁজ হন। ৫ দিন পর ১২ নভেম্বর নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি জিডি ও পরে একটি হত্যা মামলা করা হয়।

মামলাটি ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় বিপ্লবের স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, লঞ্চ কর্মচারী-কর্মকর্তা, ঘাটের ইজারাদার, মাঝিদের সঙ্গে কথা বলা হয়। এছাড়া, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ডিজিটালি বিপ্লবের মুভমেন্ট পর্যালোচনা করে মর্নিংসান-৫ লঞ্চের চালক ও টেকনিক্যাল পার্সন ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে ৭ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কুরিয়ার সার্ভিসবয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু পাট ও সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করেন। এরপর বিকেল ৫ টা ৫৫ মিনিটে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় এসে অটোরিকশায় উঠেন।

অটোরিকশাচালক বিল্লালের ভাষ্যমতে, বিপ্লবসহ ৩-৪ জনকে সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে জিঞ্জিরা ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়। তখনও বিপ্লব কুরিয়ার সার্ভিসবয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তার ফোন রেকর্ডে দেখা গেছে, তিনি সর্বশেষ নৌকায় বসে তার কর্মচারী হেলালের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জিঞ্জিরা ঘাট দিয়ে তার মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, জিঞ্জিরাঘাট ও কামরাঙ্গিরচরের মুসলিমবাগ নদীর পাড় এলাকাতে তার সর্বশেষ মুভমেন্ট ছিল।

জিঞ্জিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, মাগরীবের আজানের সময় ৫ জন যাত্রী নিয়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে আসলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিংসান-৫ লঞ্চ তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও তলিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন নিখোঁজ থাকে। ডুবে যাওয়া ওই যাত্রীই মৃত দুরন্ত বিপ্লব।

প্রাথমিকভাবে তদন্তে এটিকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু উল্লেখ করে ডিসি মশিউর বলেন, পিবিআই টিম ওই নৌকা থেকে বিপ্লবের স্যান্ডেল উদ্ধার করেছে। নৌকার মাঝি শামসু মিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সবার তদন্তে আমরা একমত হয়েছি, নৌকাটিকে ধাক্কা দেওয়ায় নিমজ্জিত হয় এবং বিপ্লব যেহেতু সাঁতার জানতেন না তাই তিনি তলিয়ে যান।

তিনি বলেন, লঞ্চটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে নৌকাটিকে ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে। যিনি লঞ্চ চালাচ্ছিলেন সে কমবয়সী একজন। তার লঞ্চ চালানোর সার্টিফিকেট আছে কি-না প্রাথমিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটিকে অনিচ্ছাকৃতভাবেই একটি দুর্ঘটনা মনে হয়েছে। কোনোদিক দিয়েই এটি পরিরিকল্পিত বলে এখন পর্যন্ত মনে হয়নি। কখনোই মনে হয়নি কেউ তাকে অনুসরন করেছেন। এটাই এখন পর্যন্ত সত্য, পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হয়নি।

দুরন্ত বিপ্লবের মাথাসহ শরীরে আঘাত এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে কি-না এটা চিকিৎসকের বলার কোনো কারণ নেই। তিনি শুধু ফিজিক্যাল অবস্থাটা বলতে পারেন। একজন ছাদ থেকে স্বেচ্ছায় লাফ দিতে পারে আবার কেউ তাকে ফেলে দিতে পারে।

দুরন্ত বিপ্লবের লাশ কেরানীগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ভেসে গেছে। দুর্ঘটনার সময় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। এছাড়া, দীর্ঘ পথে ভেসে যাওয়ার সময়ও তার লাশে আঘাত লাগতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।