ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনার অধিকাংশ স্কুলে পরিবেশন হয় না জাতীয় সংগীত!

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
বরগুনার অধিকাংশ স্কুলে পরিবেশন হয় না জাতীয় সংগীত!

বরগুনা: আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ... কোটি কোটি বাংলাদেশির হৃদয়ের গান; বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। অথচ এ সংগীত নাকি পরিবেশন করা হয় না বরগুনা জেলার অধিকাংশ স্কুলে!

দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক হলেও বরগুনায় অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এ সংগীতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না। দেশপ্রেমের শিক্ষা সম্পর্কের পূর্ণ জ্ঞান পাচ্ছে না।

জেলার বেতাগী উপজেলার সরকারি বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেনগুলোয় অধিকাংশ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। আবার স্থানীয় বা কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ সংগীত গাওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাচ্ছে না।

বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৯টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঁচটি। কলেজিয়েট দুটি, কলেজ পাঁচটি, মাদরাসা ২০টি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে দশটি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশে নিয়মিত জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দুই দফা জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নির্দেশনা থাকলেও মানা হয় একবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কেবল শীতকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। শীতকাল পার হয়ে গেলে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।  কয়েকটি স্কুলে জাতীয় সংগীত শুদ্ধ সুরে গাওয়া হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী বাংলানিউজকে জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়মে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। প্রতিদিন এ সংগীত পরিবেশনের কথা থাকলেও কোনো অনুষ্ঠান বা শীতকালেই কেবল তা করা হয়।  

এ ব্যাপারে কথা হলে বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষ্য আলাদা।

সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম কবিরের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠানে কাল ভেদে নয়, সারা বছর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। নিয়মিত প্রাত্যহিক সমাবেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানও শুরু করা হয় এ সংগীতের মাধ্যমে। যদিও স্থানীয় ও অভিভাবকদের কথার সঙ্গে গোলাম কবিরের কথার তেমন মিল পাওয়া যায়নি।

উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান দাবি করে বলেন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে না, তা হতে পারে না। সারা বছর জাতীয় সংগীত, শপথ বাক্য, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠের মাধ্যমে শ্রেণির কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এদিকে মাদরাসাগুলোর মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। শপথ পাঠ করানো হয় মনগড়া-বানানো বাক্যে। এ বিষয়ে কোনো মাদরাসা থেকে দায়িত্বরত কেউ কোনো মতামত দেয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না বা হবে না; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রতি জেলায় ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করতে বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।