ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আপনাদের দশদিন, আর ....

জাকিয়া আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
আপনাদের দশদিন, আর ....

ঢাকা: প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেছে ১২ বছর বয়সের স্কুলছাত্রী সৈয়দা জারিন রাফা। চিঠিটি জারিন এর বাবা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা তার ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন।



May 16, 2012

Madam Khaleda Zia
Former Prime Minister of Bangladesh

Subject: A request to call off the strike

Dear Madam,
With due respect, I, on behalf of all the students of Bangladesh, would like to request you to call off the strike on May 17, 2012 as like me, many other students have their exams coming very soon. Our last revision classes for the exams are going on, and these classes are indeed very important for us. Because of the strike we have to miss one whole day of important classes. Please stop spoiling our exams by dismissing the strike.
I and all the other students would be glad if you call off the strike thinking of us.
Sincerely yours
Syeda Zareen Rafa
On behalf of all students

ওই চিঠিতে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের স্ট্যার্ন্ডাড ফাইভের শিক্ষার্থী জারিন গত ১৭ মে হরতাল না পালনের আকুতি জানিয়েছিল বিরোধী দলীয় নেতার কাছে। কিন্তু ছোট্ট জারিনের আকুতিতে কর্ণপাত করেননি তিনি।

করার কথাও নয়। কারণ, আমাদের রাজনীতিবিদদের ছেলে মেয়ে কিংবা নাতী-নাতনীরাতো আর বাংলাদেশে পড়াশোনা করে না। তাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। সুতরাং দেশে থাকা জারিনদের লেখাপড়া, ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনীতিকদের ভাবার অবকাশ নেই কিংবা তাদের না ভাবলেও চলে। আর ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে দু’দফায় ডাকা পাঁচ দিনের হরতালে এবারের চলতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দুই দফা স্থগিত করা হয়। আর গত বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবারে।

জারিনের বাবা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জারিনদের পরীক্ষা হরতালের কারণে রুটিন মাফিক হচ্ছে না, পরিবর্তন আনা হয়েছে। হায় রে দেশ! হায় রে রাজনীতি!   

তবে বিরোধী দল শুধু জারিন কিংবা দেশের ছাত্রসমাজ নয়, গোটা দেশের মানুষ ও মানুষের চাওয়াকেই পুরো অগ্রাহ্য করে চলেছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো হরতালে কি করে সংসার চালায় সে নিয়ে কি কোনো দিন আমাদের রাজনীকরা ভেবে দেখেছেন? দেখেন নি। তবে, মুখে বললেও সরকারও যে হরতালের বিপক্ষে সে কথাও কিন্তু বলা যায় না।

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, হরতাল বন্ধ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নি।

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একবার বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে আর হরতাল করবে না। ’

তবে পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ সাহারা খাতুনের বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে বলেন, ``হরতাল না করার কথাটি সাহারা খাতুনের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের নয়। ``
 
অপরদিকে গত ৭ মে এফবিসিসিআইয়ের দ্বিতীয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন অর্থনীতি যে অবস্থানে আছে, এ অবস্থান থেকে আমাদের পিছু হটার আর কোন সুযোগ নেই। ``

বিরোধী দলের প্রতি তিনি বলেন, ``আপনারা আর বেশিদিন হরতাল করতে পারবেন না। অর্থনীতির যে শক্তি এ দেশে তৈরি হয়েছে, সে শক্তিই হরতাল বন্ধ করবে। ``

তবে একই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, ``বর্তমানের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে আমাদের অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের বিনিয়োগকারিরাই দেশে বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাতো আসবেনই না। ``

এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল বন্ধের আহবান জানান তিনি।

অপরদিকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, ``রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ``

তিনি ফেডারেশনের সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে হরতালের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার আহবান জানান।

বিরোধী দল আর কতো দিন সব কিছু জেনে বুঝেও নির্বিকারভাবে হরতাল দিয়ে যাবে সেটা কিন্তু নিশ্চিত করা বলা যায় না।

তবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটা কথা মনে হয় খুব যুৎসই হবে- প্রবাদ আছে, ``... দশদিন আর সাধুর একদিন। `` আপনাদের অবশ্য দশ দিন আর জারিনদের একদিন। আমরা কিন্তু সেই দিনটির অপেক্ষাতেই আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
জেএ/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর 

Jewel_mazhar@yahoo.com
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।