ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

অনির্ধারিত ছুটিই সর্ব রোগের মহৌষধ!

ইলিয়াস সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১২
অনির্ধারিত ছুটিই সর্ব রোগের মহৌষধ!

জুলাই মাসে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বুধবার একই আন্দোলনের কারণে বন্ধ করা হয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার ছুটিতে পাঠানো হয় দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরকে।

আমরা জানতাম সর্ব রোগের মহৌষধ হচ্ছে কালো জিরা। আর এখন দেখছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ মহৌষধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিরতার সমাধান কি এটাই যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া। এমনিতে আমাদের দেশে সেশনজট হচ্ছে একটি বড় সমস্যা। এর মধ্যে আবার অনির্ধারিত ছুটি হচ্ছে মরার ওপর খাড়ার ঘা।

বুয়েট
বুয়েটের বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেওয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বুয়েট শাখার সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল উদ্দীনকে রেজিস্ট্রার করার উদ্যোগ, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দলীয়করণসহ ১৬টি অভিযোগ এনে গত ৭ এপ্রিল থেকে টানা ২৮ দিন কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষক সমিতি। সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করে তারা। এরপর দুই মাস পার হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।

এ অবস্থায় ৯ জুলাই বুয়েট শিক্ষক সমিতি তিন দিনের মধ্যে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করলে ১৪ জুলাই শনিবার থেকে টানা কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা দেন।

এ ঘোষণার একদিন পরেই বুয়েটের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১১ জুলাই বুধবার থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, রমজান, শবে কদর এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সব শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ও  স্নাতকোত্তর শ্রেণীর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হল।

তবে ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, বুয়েটে কোনো গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল না, এখনও নেই। বুয়েটের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি ১১ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত হওয়ার কথা। এরপর ২৫ আগস্ট থেকে দুই সপ্তাহ পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলত ছুটি থাকার কথা রয়েছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে টানা প্রায় দেড় মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে।

মাঝে মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায় বুয়েট পরিস্থিত নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। রিটের শুনানি শেষে আদালত বুয়েটের চলমান আন্দোলনের ওপর অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের ছাত্র তাহমিদুল ইসলাম লিখনকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করতে গেলে ওই হলের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা প্রাধ্যক্ষের বাড়ি ভাংচুর করলে পুলিশের রাবার বুলেটে বিভিন্ন বর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন।

পাঁচ ছাত্র আহত হওয়ার পর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাত ১টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করে।

ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ঈদের ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে এনে ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঈদের ছুটি এগিয়ে ২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অথচ আগামী ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

পাবনা
উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার তদন্তসহ ৯টি দাবিতে গত ১৭ জুলাই থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় শহরের মোজাহিদ ক্লাবের পাশে শিক্ষকদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাস আটকায় ছাত্ররা। এরপর শিক্ষকদের গাড়িতে হামলা করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ছাত্রদের লাঠিপেটা করলে ১০ ছাত্র আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করে পাবনা সদর থানায় নিয়ে যায়।

তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান পাঁচ ছাত্রকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই পাঁচজনকেই বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে একইদিন বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। অথচ ১৫ অগাস্ট থেকে এই ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

এভাবে আন্দোলন, ধর্মঘট ও সংঘর্ষ ঠেকাতে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করাই কি এর সমাধান?

কিছু দিন আগে দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের পর পুড়িয়ে দেওয়া শতবর্ষের পুরানো সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস।

আন্দোলন থামাতে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা না করে, শিক্ষার্থীদের জীবনকে ধংস না করে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বন্ধ করতে হবে দলীয় নিয়োগ। সেই সঙ্গে শিক্ষক রাজনীতিও বন্ধ করতে হবে। দূর করতে হবে ছাত্ররাজনীতিতে লেজুড়বৃত্তি। তাহলেই কেবল এ সমস্যা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।