মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক আদর্শের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘নীল নদের পানি যেমন নীল নয়, জামায়াতের ইসলামও ইসলাম নয়, এটি আসলে মওদুদীবাদ। ’ অন্যান্য ইসলামী দলও জামায়াতকে ইতিবাচকভাবে দেখে না।
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী গণতন্ত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্র বিষাক্ত দুধের মাখনের মতো। ’ (সিয়াশি কাশমাকাস, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ১৭৭)
এজন্য তিনি ‘রাসায়েল ও মাসায়েল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোনো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ইসলাম অনুযায়ী হারাম। ’ (প্রথম সংস্করণ, পৃ. ৪৫০)
জামায়াতে ইসলামী বলে, কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক সমাজ গঠন, শরিয়াহর প্রয়োগ এবং মানবতার কল্যাণে নেতৃত্ব প্রদানই তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু সব সময় তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ডে এমন সব বৈপরীত্য দেখা গেছে, যা ইসলামপন্থী দাবির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
বিশ্বায়নের এই সময়েও জামায়াত তাদের এই রাজনৈতিক দ্বিচারিতা থেকে বের হতে পারেনি। ইসলামের ন্যায়ের শিক্ষার পরিবর্তে তারা ক্ষমতাকে মুখ্য করেছে, যা সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
ব্রিটিশ ভারতের আশ্রাফী মুসলমানরা জন্ম দিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ। নিপীড়িত বাঙালি মুসলমানের সংগ্রামী অর্জন সেদিন ধর্মের নামে উত্তর ভারতের আশ্রাফী মুসলমান জমিদার শ্রেণির হাতে চলে গিয়েছিল। এদিকে মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অখণ্ড বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলু্ল হক ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর সম্মেলনে ভারতের পূর্বাঞ্চলে নিপীড়িত বাঙালিদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি করলেন। এতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে উত্তর ভারতের মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিরোধ দেখা দিল।
শেরেবাংলা বিকল্প হিসেবে বাংলার কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠন করলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধী বাঙালির আলাদা রাষ্ট্র মেনে নিলেন না। এদিকে হিন্দুস্তানের আশ্রাফী মুসলমানরা নিজেদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠাল। তাঁদের আদর্শ নেতা মাওলানা মওদুদী লাহোর প্রস্তাবের পরপরই ভারতের ভূপালে নিজ বাসভূমে বসে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট প্রতিষ্ঠা করলেন জামাত-ই-ইসলামী-হিন্দ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের আশ্রয়ে জন্ম নেওয়া এই দলটি ১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারতের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে।
মওদুদী একাধিকবার ঘোষণা দেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র হবে ‘আহাম্মকের বেহেশত’ ও ‘কাফেরানা রাষ্ট্র’। ১৯৪৮ সালে ইসলামী সংবিধান প্রতিষ্ঠার প্রচারণা চালালে মওদুদী গ্রেপ্তার হন। একই বছর পূর্ব পাকিস্তানেও জামায়াত কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৫৩ সালে মওদুদীর নেতৃত্বে কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়। আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতা না থাকার মিথ্যাচার করায় আন্দোলনের শরিক অন্য দল ‘খতমে নবুয়াত’ মাওলানা মওদুদীকে ‘ধর্মদ্রোহী’ এবং ‘আল্লাহতে অবিশ্বাসী’ বলে ফতোয়া প্রদান করে। (জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে যত ক্ষোভ, ১১ মার্চ ২০২৩, দৈনিক সংবাদ, অনলাইন)
১৯৫৪ সালে গোলাম আযম জামায়াতে যোগ দেন এবং পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠনটি শক্তিশালী হতে শুরু করে। ১৯৫৫ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ গঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সব দলের সঙ্গে জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করেন, যা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে। পরে তারা মুসলিম পারিবারিক আইন ও শিক্ষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে পুনরায় আলোচনায় আসে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবির বিরোধিতা করে দলটি। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় আইয়ুব খানের আস্থা অর্জন করে তারা।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জামায়াত ১৫১ আসনে প্রার্থী দিয়েও মাত্র চারটি আসনে জয় পায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইটের ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্বপাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্বপাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। ’ (সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৭১)
গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধের শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতাই করেননি, বরং তিনি এবং তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। তারা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে।
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুষ্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াতকর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। দৈনিক সংগ্রামে ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ১২ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে পরিচালিত শান্তি কমিটির মিছিল শেষে গোলাম আযমের নেতৃত্বে মোনাজাত হয়।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযম বলেন, ‘জামায়াতকর্মীরা রাজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোনো স্থান হতে পারে না। জামায়াতকর্মীরা শহীদ হতে পারে, কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না। ’ (দৈনিক সংগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)
গোলাম আযম বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান যদি না থাকে, তাহলে জামায়াতকর্মীদের দুনিয়ায় বেঁচে থেকে লাভ নেই। ’ (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)
১৯৭১ সালে গোলাম আযম বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ নামের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করব। ’
১৯৭২ সালে গোলাম আযম পাকিস্তানে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ’ পালন করেন এবং লন্ডনে ‘পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটি’ গঠন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত গোলাম আযম সব মিলিয়ে সাতবার সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিটি বৈঠকেই তিনি সৌদি বাদশাহকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এই সময়কালজুড়ে বাংলাদেশকে কোনো প্রকার আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য-সহযোগিতা না করার জন্য মুসলিম দেশগুলোকে প্ররোচিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। (কামাল শাহরিয়ার, গোলাম আযমের কাছে সরকার কি হারলেন?, ২৬ ডিসেম্বর ২০১১, বিডিনিউজ)
১৯৭৩ সালে সরকারের আদেশে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়, কিন্তু তিনি বিদেশে সফর চালিয়ে যান এবং সর্বত্র বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালান। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত গোলাম আযম নাগরিকত্ব পুনঃপ্রাপ্তির চেষ্টা করেন, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তবু ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্টে ঢাকায় আসেন এবং পরে অবৈধভাবে দেশে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে গোপনে ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে আব্বাস আলী খান ভারপ্রাপ্ত আমির হলেও প্রকৃত নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। তখনো জামায়াতের প্রধান কার্যালয় ছিল পাকিস্তানে। এরশাদ সরকারের সঙ্গে তাদের সখ্য তৈরি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অংশ নিয়ে সংসদে ১০টি আসনও লাভ করে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে তারা নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৮টি আসন ভাগিয়ে নেয়। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা আবারও জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। তবে একই বছর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলী নির্বাচনী জোট করে মাত্র তিনটি আসন পায়। ১৯৯৯ সালে পুনরায় বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট গঠন করে, যা ২০০১ সালের নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য এনে দেয়। ওই নির্বাচনে ১৭টি আসন লুফে নেয়। এই দলটি সব সময় সরকারি দলে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার ক্ষীর খেয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়। এবার তারা সরকারি দলে যেতে ব্যর্থ হলো। যদিও ওই সময়ে তাদের ভোটের জোট ‘চারদলীয় ঐক্য’-এর শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া নির্বাচনেই যেতে রাজি ছিলেন না। জামায়াতের ওই সময়ের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এক ধরনের হুমকি দিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছেন বলে রাজনৈতিক মহলে চাউর আছে। পরে নতুন প্রজন্মের আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে দলটি ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে হাসিনা সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কিছু নেতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় জড়িয়ে দল হিসেবে জামায়াতকে এক ধরনের সুযোগ করে দেয়। কারণ ওই বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশে বেশির ভাগ সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই জামায়াতের নৈতিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। ভোটের মাঠের মিত্র বিএনপিও তাদের পরিত্যাগ করে।
আওয়ামী লীগের পুরো শাসনামলে ছাত্রলীগের ভেতরে জামায়াত-শিবির গোপনে থেকে প্রকৃত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীর ছদ্মবেশ ধারণ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর এ কারণেই সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রচলিত ধারণা হয়েছিল, ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগে ‘তারা’ গুপ্ত ছিল। এর বেশ কিছু প্রমাণও এরই মধ্যে মিলেছে, যদিও এটিকে রাজনৈতিক কৌশল বলে চালিয়ে দিয়েছে দলটি। ইসলামে সত্য ও আদর্শের লড়াইয়ে নিজের পরিচয় গোপনকারীকে মোনাফেক ঘোষণা করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুদ্ধ জয়ের জন্য নিজের পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশ ধারণ করেননি। এটিই ছিল নবীর আদর্শ বা ইসলামের শিক্ষা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’ বলে অপমান করছে। রাজনীতিতে তাদের কোনো অনুশোচনা আজও আসেনি, বরং একাত্তরের সেই বিশ্বাসঘাতকতার ধারাবাহিকতাই তারা আজ আরো জোরালো এবং এক ধরনের যৌক্তিক অবস্থান বলে তুলে ধরছে।
কয়েক মাস আগে ছাত্রশিবির তাদের নিজস্ব পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবল প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত ছাত্রশিবিরকে তাদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয়।
এমনকি গত আগস্ট মাসে ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকারদের ‘শহীদ’ পরিচয় দিয়ে টিএসসিতে প্রদর্শনী করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের তীব্র প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই কলঙ্কজনক প্রদর্শনী সরাতে বাধ্য হয়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছায়ায় থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই বেশি মনোযোগী এই সংগঠনটি। সুযোগ বা ছাড় পেলে সহচরের ভূমিকা পালন করেছে, আর প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে চক্রান্তমূলক রাজনীতি চালিয়ে গেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বিএনপিসহ ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি অপপ্রচার চালাচ্ছে জামায়াত। একইসঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকার এবং বেশির ভাগ রাজনৈকি দল যখন এক সুরে কথা বলছে, ঠিক তখনই অতীতের ধারাবাহিক চরিত্রে এই দলটি। নিত্যনতুন অজুহাত বা দাবি তুলে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা ছাড়া আর কী-ই বা করছে? এটি আসলে তাদের অতীত ভুল রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ছাড়া আর কী হতে পারে?
মূলত তারা একটি একরঙা, বৈচিত্র্যবিহীন, রুদ্ধ সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ, লক্ষ্য ও সবার বাংলাদেশ দর্শনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুগ্ম সম্পাদক, কালের কণ্ঠ