ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আবেগ নয়, সংহতি আর কৌশল প্রয়োজন

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৩
আবেগ নয়, সংহতি আর কৌশল প্রয়োজন

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে: আমরা হুজুগে জাতি, আমরা আবেগি জাতি। আবেগ যে কোনো বড় কাজের প্রেরণা, সাহস ও শক্তিকে আবেগ দেয় বেগ।

কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত আবেগই আবার সর্বনাশ ডেকে আনে।

আমার এক নাট্যকর্মী বন্ধু বলতেন, ‘আমাদের আবেগ এতো সর্বনাশা আর ভয়াবহ যে, একাত্তরে এগোবার সময় আমরা আমাদের প্রতিরোধ দেয়ালটিও ভেঙে এগোই। তাই আজ যে কোনো বিপদে পেছাতে পেছাতে কোথাও দেয়ালে পিঠ ঠেকে না। সর্বনাশের খাদে পড়ে যাবার
আগেও টের পাই না আমরা। ’

শাহবাগের আন্দোলন আর তার চেতনা এখন দেশেই শুধু সীমাবদ্ধ নেই। দেশের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তেতে আছেন। তবে এখন ভাগ হয়ে গেছে প্রবাসী জনমত। শুরুর দিকে পরিস্থিতি এমন ছিল না। পুরোটাই ছিল শাহবাগের চেতনার পক্ষে।

যখন থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবিরকে মদদ দিতে মাঠে নামলেন। ঘোষণা দিলেন, বিএনপিও আছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে হরতাল দিলেন, তখন থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল। জামায়াত-বিএনপি একযোগে দেশ-বিদেশের আবহকে করে তুললো বিষময়।

এই ষড়যন্ত্র নতুন নয়। কিন্তু আমরা কি করছি?

আমাদের সঙ্গে সংস্কৃতি আছে, ইতিহাস আছে মানুষও আছে। কিন্তু আমাদের নেই পরিকল্পনা। আমাদের সবটাই এলোমেলো। আমরা টকশো’ থেকে মাঠ, মাঠ থেকে সমাবেশ সর্বত্রই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। কথার ফুলঝুরিতে কাজ থেমে যায় আমাদের।

ওরা তার বিপরীত। ওরা টার্গেট ঠিক করে। তারপর অ্যাকশানে যায়। ওরা টার্গেট ঠিক করলে মানুষ তো মানুষ পুলিশও নিজেকে বাঁচাতে পারে না। রাজীবকে যখন হত্যা করা হল, শাহবাগের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আন্দোলনের ওই সময়ে রাজীব হত্যার পরও আমরা তাদের বিষয়ে সাবধান না হয়ে গলাবাজিতে ব্যস্ত থাকলাম।

বিদেশেও তাই। যতো আবেগ তার চেয়ে অনেক কম পরিকল্পনা।

তবে এই জায়গাটায় এখনো আমাদের আশার প্রতীক তারুণ্য। বিলেতের টিভির একটি টক শো’তে সেখানকার তারুণ্য ধর্ম ও বিএনপি জোটের বয়স্কদের ধরাশায়ী করে
দিয়েছেন। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, বয়স্কজনদের এখন জায়গা ছেড়ে দেবার সময়। তাছাড়া আমাদের দ্বিধাবিভক্ত সমাজ ও দেশে বয়স্কজনেরা বরাবরই বড় দু’টো দলের সমর্থক অথবা ধামাধরা।

শাহবাগ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ছায়ার প্রয়োজন ছিল এবং তাদের সমর্থন না থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ও ঘটতে পারতো। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ বা খবরদারির প্রয়োজন ছিল না। কৌশলগত এই ত্রুটি শত্রু দলকে বেগ দিয়েছে। জনগণের আন্দোলনকে প্রশ্নের মুখোমুখি
করেছে, যার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।

দেশের শাহবাগকে আস্তিক-নাস্তিকে ভাগ করে ফেলার বিষয়টিও সামাল দিচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু এসব জটিল প্রশ্নে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। মাঠে নেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেলায়ও।

প্রবাসের বাস্তবতায় দেশি দলগুলোর শাখা-প্রশাখার চেয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই কাজ করছে বেশি। সিডনিতে এ আন্দোলনের পেছনে বলিষ্ঠ তারুণ্যকে অভিনন্দন জানাই।

শাহরিয়ার পাভেল, রাজন নন্দী, আল নোমান শামিম, জন প্রভুদান, শীর্ষেন্দু নন্দীসহ আরো অনেক তারুণ্যের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা সিডনির গণজাগরণ মঞ্চ তাই তাদের হাতেই থাকতে হবে। বয়স্কজনরা অবশ্যই থাকবেন। তবে অভিভাবকের দায়িত্ব ছাড়া অন্য দায়িত্বে থাকা তাদের মানায় না। এতে গতিবেগ ব্যহত হবে। আমরা আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ফসল ঘরে তুলতে পারবো না।

এখন যা হচ্ছে, তা একটা টোটাল ওয়্যার। এখানে ধর্ম, অধর্ম, নারী, যুদ্ধ যাবতীয় বিষয় ঢুকেছে। যার জবাব দিতে তারুণ্যের বিকল্প নাই। বিকল্প নাই সার্বজনীন ঐক্যেরও। সেটা করতে হলে চাই, কৌশল ও পরিকল্পনা।

আক্রান্ত শহীদ মিনার, জাতীয় স্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পতাকা, দেশে-বিদেশে আক্রান্ত সংখ্যালঘু, সাধারণ মানুষ সবই আমাদের সঙ্গী। বিদেশে সব ধরনের জটিলতা বাদ দিয়ে সামগ্রিক ঐক্য না হলে আমরা জয়ী হতে পারবো না।

এ সহজ সত্যটি সবাই মেনে চললেই জয়ী হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।