ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্রপতি হন...

আবুল কাশেম হৃদয়, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৩
শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্রপতি হন...

মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে পুরো জাতি শোকাহত। আর শোক আবহে এখন আলোচনা চলছে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হতে পারেন তা নিয়ে।

নতুন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আলোচনায় উঠে এসেছে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকার, জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নাম।

সবার কাছে গ্রহণযোগ্য আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের নাম ঢাকায় সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে যেমন আলোচিত হচ্ছে তেমনি ঢাকার বাইরেও আলোচিত হচ্ছে তাঁর নাম। সংসদে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামাল দিতে সক্ষম হওয়ায় ভবিষ্যতেও সংসদের বাইরে রাজনৈতিক সঙ্কট বা পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবেন বলে দেশের মানুষ তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন।

আবার দলীয় প্রধানের আস্থাভাজন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীকে নিয়েও আলোচনা আছে কিন্তু দেশের দ্বিতীয় প্রধান দৈনিক শুক্রবার তাদের পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ষ্টিফেন র‌্যাপের লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে ‘ছেলেকে বাঁচানোর বিষয়ে’ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ভূমিকার সমালোচনা (পত্রিকাটির সংবাদ বিশ্লেষকের ভাষায় ‘বড় খটকা) তুলে ধরেছে। এই মূহূর্তে দ্বিতীয় প্রধান দৈনিকটি কেন তা করেছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে। (সোজাসাপটা বলে দিলেই পারতো সাজেদা চৌধুরীকে চাই না, কারণ মার্কিন দূত চায় না)

একটি কথা স্পষ্ট যে ২০তম রাষ্ট্রপতি যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি আগামী ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন। কেননা রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদের সাথে দলীয় সরকারের মেয়াদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি যে দলীয় বিবেচনায় নির্বাচিত হবেন এবং বর্তমান সংসদই যে ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে তা জোর দিয়েই বলা যায়।
এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে যে কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই নির্বাচিত ব্যক্তিত্ব। আর অরাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে গেলে যে সুখ স্বাদ পাওয়া যায় না তার অভিজ্ঞতা তো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু’দলেরই আছেই।

অতীতে অরাজনৈতিক বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগ এবং অরাজনৈতিক অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন ও দলীয় প্রভাবশালী নেতা বদরুদৌজ্জা চৌধুরীকে বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলো।

অনেকেই বলছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চমক দেখাতে পারেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হন ? (এটি একটি কাল্পনিক চিন্তা) তাহলে কেমন হয় ? ভেবে দেখুন এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সাড়ে চার বছরের জন্য একটি ‘জাতীয় সরকারের’ পথ সুগম হয় কি না ?

১. আওয়ামী লীগের ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার মেয়াদ আর কয়েকমাস। গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ বছর ক্ষমতায় আছেন কিন্তু শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলে আগামী আরো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতার শীর্ষে থাকতে পারবেন। তাঁর দল আগামী নির্বাচনে পরাজিত হলেও।
২. আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তো কোন চিন্তাই নেই আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বিজয়ী হলে সেই সরকারের ক্ষমতার শীর্ষেও থাকবেন শেখ হাসিনা।
৩. আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রধানমন্ত্রী হবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকছেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষের চিন্তার যে ‘জাতীয় সরকার’ তার প্রতিফলন দেখা যাবে। (কেননা চলতি ৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলো এবং আগামী ৫ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে( নির্বাচিত হলে)। আবার কেউই ক্ষমতাহীন হবেন না)।
৪. শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলে প্রধানমন্ত্রী পদে আরেকজনকে বসাতে পারছেন কয়েকমাসের জন্য। এতে ভবিষ্যত আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বিকাশের একটি সুযোগ থাকছে। কয়েকমাসের জন্য হলেও যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। যার সুফল ভবিষ্যতে ভোগ করবে আওয়ামী লীগ। আর যদি আগামী নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় তাহলে তা হবে আরো ভালো।
৫. ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক মৌলবাদীদের টার্গেট যে শেখ হাসিনা তার বড় প্রমাণ বিএনপি সরকারের মদদে ও ছত্রছায়ায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় তাঁকে হত্যার চেষ্টা। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।  
৬. শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি আদেশ সাধারণ ক্ষমা করার সুযোগও থাকবে না। সেই সাথে সাধারণ ক্ষমা করার সুযোগ থাকবে না বিএনপি সরকারের সময়ের দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিতদেরও।
৭. আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও দুই তৃতীয়াংশ  সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে অভিশংসনের সুযোগ থাকছে না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ হাসিনা চাইলে প্রধানমন্ত্রীর যে কোন পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে পারবেন। সেই অপরাধের বিচার কোন আদালত করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদটি যে অলংকারবহুল নয়, তাও প্রমাণিত হবে।
৮. শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি থাকলে যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সে চেতনা বাস্তবায়নের পথ কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না বরং সে চেতনা বাস্তবায়নের পথ আরো সুগম হবে।

সহিংস রাজনীতির কারণে দারুন বিরক্ত অনেকে প্রায়ই বলেছেন এবং বলছেন আগামী নির্বাচনের সময় সরকার ও বিরোধী দল থেকে সমান সংখ্যক নির্বাচিত সদস্য নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলে সেই চিন্তা সাময়িক সময়ের জন্য নয় বরং সে চিন্তা বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হবে অন্তত সাড়ে চার বছরের জন্য (যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়)। আর আগামী নির্বাচনে জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে আবার বিজয়ী করে তাহলে তো জাতীয় সরকার নিয়ে আর আলোচনা করেও লাভ নেই। জনগনের সিদ্ধান্তকেই তো মেনে নিতে হবে।

* আবুল কাশেম হৃদয়, সম্পাদক দৈনিক কুমিল্লার কাগজ, সাধারণ সম্পাদক কুমিল্লা প্রেসক্লাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।