ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

টেলিভিশনে দলবদলের হাওয়া!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
টেলিভিশনে দলবদলের হাওয়া!

Tushar-abdullahঢাকা: টেলিভিশন পাড়ায় শুরু হয়েছে, দল-বদলের মৌসুম। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলোয়াড়দের মতোই টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মীদেরও দল-বদলের মৌসুম আসে।

সেই মৌসুমটি অনির্ধারিত।
 
যখন নতুন কোনো চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করে, বলা যায়, লোক নিয়োগ দেওয়া শুরু করে, তখনই নড়াচড়া শুরু হয় টেলিভিশন কর্মীদের মধ্যে। এবার ঈদ-পূজার আগে থেকেই সেই ‘নড়ন-চড়নটা’ শুরু হয়ে গেছে। কারণ, ‘যমুনা’ টেলিভিশন আবার সম্প্রচারের অনুমোদন পেয়েছে। তারা শুরু করেছে, লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া। ‘দীপ্ত’ টেলিভিশন লোক জোগাড়ে আরো আগে মাঠে নেমেছে। কিন্তু, ‘যমুনা’-য় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বিনিয়োগ বলে ধারণা প্রচলিত থাকায় এবং চ্যানেলটি নিউজ চ্যানেল হতে পারে; তাই, দল-বদলে আগ্রহী কর্মীদের প্রথম পছন্দ ‘যমুনা’। পাঁচমিশালী চ্যানেল ‘দীপ্ত’র কারো কারো বিকল্প ভাবনায় থাকতে পারে।
 
এদিকে, কখনো অনুষ্ঠান, কখনো স্পোর্টস চ্যানেল হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ‘চ্যানেল নাইন’ও খবর প্রচার শুরু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। একই ঘোষণা এসেছে ‘এশিয়ান টেলিভিশন’ থেকেও। অনুষ্ঠান চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও তাদেরও এখন খায়েশ সংবাদ প্রচারের। সংবাদ প্রচারের প্রস্তুতি হিসেবে বেশ আগেই শীর্ষ পদে কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়েছে। নিজেদের কর্মী বাহিনী তৈরি করতে, সবাই হাত বাড়িয়েছেন। সেই হাতে টাকা-কড়ি’র অংকটা কত উদার, তা দেখে নিচ্ছেন টেলিভিশনের সব বিভাগ ও স্তরের কর্মীরা।

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বেতন-বোনাস পরিশোধের পর পরই, একেকজন দল বদলের ঘোষণা দিতে শুরু করেছেন। ঈদ-পূজার ছুটি কাটিয়ে তারা নতুন অফিসে যোগ দেবেন। এই দল-বদলে যে চ্যানেলগুলো থেকে কর্মীরা ছুটছেন, তারাও তাদের ঘর গুছিয়ে নিতে তৎপর। সব মিলিয়ে দল-বদল ঘিরে নানা শঙ্কা এবং গছিপ নিয়ে টেলিভিশন পাড়া এখন মুখরিত।
 
দল-বদলের এই মুহূর্তগুলোতে আমি খুব রোমাঞ্চ বোধ করি। যেমনটা করতাম মোহামেডান-আবাহনী’র ফুটবল-ক্রিকেটের দল-বদলে। সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে আমিও দল-বদলের সময় ভালো কাজের জায়গাটা খুঁজে নিতে বরাবরই আগ্রহী ছিলাম। দুই-একটি দলবদলের নেতৃত্বেও ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, দল-বদলে দূরদৃষ্টি কাজ না করলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়; যা নিকট ও দূর ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা পেশাদার গণমাধ্যম কর্মী, তারা যোগ্যতা অনুসারে বেতন যেমন প্রত্যাশা করেন, তেমনি কাজের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো একটি জায়গার খোঁজেও  থাকেন।

অনেককেই দেখেছি, কাজের সুন্দর পরিবেশের স্বার্থে লোভনীয় অফারের হাতছানিতে সাড়া দেননি। তারা প্রায় সবাই স্বস্তি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। আবার অনেককে এখনো মেগা অফার দেখা মাত্রই লাফ দিয়ে লুফে নিতে দেখি। তাদের কারো কারো হাল তাঁতী নষ্টের মতো! টেলিভিশনের চাকরির বাজার বছর ছয়েক আগেও সীমিত ছিল। চ্যানেল সংখ্যা যত বেড়েছে, ততই প্রসারিত হয়েছে এখানকার কাজের সুযোগ। দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর সমাবেশ ঘটেছে এখানে।
Television
অনেক নতুন মুখ এই মাধ্যমে এসে যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। আবার অনেকে স্বল্প যোগ্যতা নিয়ে অন্যদের পেছনে ফেলে  ‘নেওয়ার’ স্বাদ নিয়েছে।
 
অন্যদিকে, চ্যানেলের সংখ্যা বাড়লেও সব চ্যানেল যেমন দর্শকপ্রিয়তা পায়নি; তেমনি সেখানে তৈরি হয়নি কাজের পরিবেশও। কোনো কোনো চ্যানেল আর্থিক সংকটে আছে বলেও টেলিভিশন পাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে। ফলে, কয়েকটি চ্যানেলের বেতন-ভাতাও অনিয়মিত।

দল-বদলের বেলায় সবচেয়ে ঝুঁকি হচ্ছে, নতুন চ্যানেলে যোগ দেওয়া। বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল থেকে আনকোরা কোনো চ্যানেলে যেতে হলে অনেক বিষয় ভেবে দেখার আছে। বিশেষ করে আমাদের এখানে দেখা যায়, নতুন একটি চ্যানেল বাজারে নেমেই অনেক বড় হাকডাক দেয়। বেতন-ভাতা এবং কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।

অনুষ্ঠান, খবরের কভারেজ এবং কারিগরি সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে তারা বাজারে অনেক গল্পের ফানুস ওড়ায়। সেই ফানুস দেখে অনেকেই নতুন চ্যানেলের সেই ফানুসের সুতো ধরতে লাফ দেন। পরে দেখা গেছে, হাতে সুতো আছে, কিন্তু ফানুসটি যে কোথায় উড়ে গেছে, তার দেখা নেই।

আমার অনেক সহকর্মীর ফানুস ধরার গল্প আমি জানি। তাদের পরিণতি আমাকে আহত করে। যে চ্যানেলগুলো দর্শকপ্রিয়তা পায়নি এবং আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে, সেই চ্যানেলের কর্মীরা বরং একটা ঝুঁকি নিতেই পারেন। কারণ, যদি লেগে যায়!
 
তবে দল-বদলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে কোনো সংবাদ কর্মীরই নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখতে হবে- তিনি কেন এই চ্যানেলটি ছেড়ে যাচ্ছেন! কাজের পরিবেশ নেই? যোগ্যতা অনুসারে তিনি ব্যবহৃত হচ্ছেন না? বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট না? যে চ্যানেলটিতে যাচ্ছেন সেখানে কি এই তিনের নিশ্চয়তা আছে? নিশ্চয়তা থাকলে তার টেকসইয়ের নিশ্চয়তা কত দিনের? সেই সঙ্গে চ্যানেলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থানও বিবেচনায় রাখতে হবে।

চ্যানেল পরিচালনার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব এবং রাজনীতির আনুপাতিক হার কতটা হতে পারে, বিবেচনায় রাখতে হবে তা। কারো কারো মধ্যে এমন প্রবণতাও আছে, দ্রুত চ্যানেল বদল করে পদ এবং বেতন বাড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু, যোগ্যতার মাপকাঠির চেয়ে যদি প্রাপ্তি বেশি হয়ে যায়, তখন তা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই বিপাকেও অনেক সহকর্মীকে পড়তে দেখা গেছে।

৩০ হাজার টাকার পণ্য যদি ৫০ হাজারে একবার বিকোয়, তাহলে দ্বিতীয় দফা তার প্রতি কোনো চ্যানেলের আগ্রহ নাও থাকতে পারে। আর এখনকার বিজ্ঞাপন মন্দার বাজারে চ্যানেলগুলো শুরুতে লোভনীয় অফার দিয়ে মাঠ গরম করলেও, কিছুদিন পরেই ব্যয় কাটছাটে মনোযোগী হয়। তখন মোটা অংকে সংগ্রহ করা কর্মীরা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই, দলবদলের মৌসুমে নিজেকে বাজারে মেলে ধরার আগে একবার ভেবে নিতেই হবে, সিদ্ধান্তটা কত দীর্ঘ সময়ের জন্য সুবিবেচনার হচ্ছে!

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
এডিএ/এবি/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।