ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ওদের অপপ্রচার, আমাদের জবাব!

ডা : মুহাম্মদ আলী মানিক, সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
ওদের অপপ্রচার, আমাদের জবাব!

বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নিকট রাজনীতি আর জনপ্রিয়তায় ধরাশায়ী হয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে ৷ মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের সাথে এই মিথ্যাচারে হাত মেলায় চীন সমর্থক বাম পন্থীরা। পরে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধ্বজাদারি জাসদও এতে সামিল হয়! টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত মাওলানা ভাসানীর "হক কথা" এই অপপ্রচারে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছিল সেই সময়, তার পরেই ছিল জাসদের "গণকণ্ঠ" আর ইংরেজি "হলিডে" পত্রিকা ৷ এখানে উল্লেখযোগ্য যে হক কথা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ইরফানুল বারি নামে টাঙ্গাইলের কুখ্যাত এক রাজাকার! স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সেই লাগামহীন অপপ্রচার সাধারণ মানুষদের কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত করেছিল! স্বাধীনতার এত বছর পরও সেই মহলটি একই স্টাইলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে দল বদল হয়ে সেই মহলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি-জামাত চক্র! মিথ্যাচারে যদি কোনো "নোবেল পুরস্কার" থাকতো , তাহলে বিএনপি-জামাত চক্র নিঃসন্দেহে তা পেয়ে যেত ! নিচে সেই কুখ্যাত লাগামহীন অপপ্রচারের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো:

এক . রক্ষিবাহিনী নাকি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গঠিত ছিল, যা ‘হক কথা’ই বেশি প্রচার করেছিল৷ `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর একজন ভারতীয়কেও খুঁজে পাওয়া যায়নি রক্ষিবাহিনিতে! উল্টো সেই দিন পুরো বাহিনিকেই বাংলাদেশ আর্মিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো৷ যদি রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা নৈতিকতার দিক থেকে এতই খারাপ হত, তা হলেতো বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর মত প্রতিষ্ঠানে তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হতোনা!

দুই. রক্ষীবাহিনীর হাতে নাকি ত্রিশ হাজার জাসদ কর্মী নিহত হয়েছিলো! কিন্তু `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর একটি পরিবারও নিহতদের তালিকা চেয়ে এগিয়ে আসেনি বা বিচার চায়নি! (অনেকটা শাপলা চত্তরের মত মিথ্যাপ্রচার) !

তিন. বিএনপি আর তার মিত্ররা দাবি করে জিয়া নাকি `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে! ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ১৮টি রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে গঠন করেছিলেন যুগোপযোগী "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ", তাই `৭৫ পট পরিবর্তনের পর সেই ১৮টি দলের কর্মকাণ্ডের মাথ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকার কথা ৷ অথচ সামরিক শাসক জিয়া `৭৫ এর নভেম্বরে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ চার বছর পর দেশে তথাকথিত বহু দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করে ! এই চার বছর জিয়া ভয় , ক্ষমতা আর টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন দল ভেঙ্গে , "দল ছুটদের " নিয়ে সামরিক ছাওনিতে গঠন করে "বিএনপি" ! আর দলের প্রতিকটিও হাইজ্যাক করা হয় ভাসানী ন্যাপ থেকে ! ক্যান্টনমেনটে বন্দুকের নলে দল গঠন করে জিয়া তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের লেবাসে আসলে "এক দলীয় স্বৈরশাসন" প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে মগ্ন ছিলেন ৷ তার অকাল জীবনাবসান না হলে মিসর-লিবিয়া-সিরিয়ার মত বাংলাদেশকেও এক দলীয় স্বৈরশাসকের যাতাকলে নিস্পেষিত হতে হতো! তাই বিএনপি ও তার মিত্রদের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গলাবাজি একটা মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয় !

চার. বিএনপির নেতৃত্বাধীন স্বাধিনতাবিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে অপপ্রচার করে আসছিলো যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ নাকি ভারতের করদ রাজ্যে পরিনত হয়ে যাবে আর দেশে নাকি ইসলাম ধর্ম থাকবে না , মসজিদে নাকি আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি হবে! এত সব অপপ্রচারের পরও আওয়ামী লীগ দুই দুইবার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু তার কিছুই হয়নি ! উল্টো বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই ভারতের তাবেদারি করেছে , এমনকি খালেদা জিয়া ভারত সফরের সময় পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আলোচনা করতে নাকি ভুলে গিয়েছিলেন! আসলে বিএনপি "ক্ষমতায় থাকলে ভারত তোষণ আর বিরোধী দলে থাকলে ভারত দোষন" এ বিশ্বাসী !

পাচ. ফারাক্কা বাঁধ নিয়েও কম অপপ্রচার হয়নি! আওয়ামী বিরোধীরা এতদিন বলে এসেছে যে ফারাক্কার জন্য নাকি বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে! কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুভূমির বদলে সবুজ বিপ্লব ঘটে গেছে! ফারাক্কা বাঁধের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে আবাদী জমির সীমানা বেড়ে গেছে, প্রলয়ংকরী বন্যা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, বাম্পার ফলন হয়েছে আর মঙ্গাও দূর হয়ে গেছে!

ছয়. দুর্নীতি নিয়েও কম অপপ্রচার হচ্ছে না! খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসাবে মোসাদ্দেক আলী ফালু আর হারিস চৌধুরী যে ভাবে "আঙ্গুল ভুলে কলা গাছ" হয়েছেন, শেখ হাসিনার কোনো একান্ত সচিবের বেলায় তার কিছুই হয়নি ৷ তা ছাড়া বাংলাদেশের ধনী লোকদের তালিকা করলে দেখা যাবে যে তাদের ৭০% বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, যাদের বেশির ভাগ দুর্নীতি করে ধনী হয়েছে ! দুর্নীতিতে বিএনপি পর পর তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর আওয়ামী লীগ সেই কালিমা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিয়ে দেশকে ৪০ নম্বরে নিয়ে এসেছিলো !

সাত. বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নাকি বস্তাভর্তি টাকার বিনিময়ে, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেছে! বিএনপি-জামাত গত নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই এই মিথ্যাচার করে আসছে৷ মইন -ফখরুদ্দিন গং যদি বিএনপিকে ইচ্ছে করেই হারাতো, তা হলেতো খালেদা জিয়া পাচ পাঁচটি আসনে জিততে পারতেননা! জে : মইন এর ভাই সহ তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুভাকাংখী ফেরদৌস কোরেশী, মান্নান ভুইয়া, বদরুদ্দোজারা সহজেই জিতে যেতেন যদি সত্যি কোনো ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতো! নির্বাচনে "গো হারা" হয়ে "নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা" র মতই যুক্তি দেখাচ্ছে বিএনপি !

আরো অনেক কিছু নিয়েই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত মিথ্যাচার করে আসছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে কোনো ইস্যু না পেয়ে গলাবাজি আর অপপ্রচারই তাদের একমাত্র অস্ত্র এখন! কিন্তু আগামী দিনের নেতা ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রপথিক সজীব ওয়াজেদ জয়ের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপে বিরোধীদলের লাগামহীন অপপ্রচারে ভাটা পরেছে! বিলবোর্ড , সামাজিক মিডিয়া আর টিভি টক-শোতে বর্তমান সরকারের অভূতপূর্ব সফলতার সচিত্র প্রতিবেদনে বিএনপি-জামাত এখন দিশেহারা !

বাংলাদেশ সময় ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
এমএমকে/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।