ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রাজনীতি ও গণতন্ত্র

তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তবর্তীকালীন সরকার মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

সাইদুল ইসলাম মন্টু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৩
তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তবর্তীকালীন সরকার মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে দেশের সাধারণ মানুষ আজ বিচলিত। বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশে এখন একটি চরম রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি সবাই সবার অবস্থানে অনড়। বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইছে আর আওয়ামী লীগ চাইছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে, বিষয়টা মোটামুটি এই রকম।

কার অধীন নির্বাচন হল, তা কখনোই বড় কথা নয়। আসল কথা হল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হল কিনা। দেশের মানুষ আরও জানতে চায় নির্বাচন পরবর্তী সরকার কী ভাবে দেশ পরিচালনা করবে। দেশ পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক নেতাদের পরিকল্পনাই বা কী?

বর্তমানের অচলাবস্থা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তা কিন্তু কোনো দলই স্পষ্ট করে বলছে না। বিএনপির আন্দোলন কিভাবে ক্ষমতায় ফিরে যাওয়া যায় আর আওয়ামী লীগ’র চেষ্টা কি করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। এই দুই দলের টানাপোড়েনের মধ্যে দেশের মানুষ আজ গভীর সংকটে পতিত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হরতাল, বোমাবাজি, জ্বালাও পোড়াও, পুলিশের নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, গণহত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা, জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই অবস্থা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর তাই রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজকেই নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকেই।

নির্বাচনকালীন সরকারের নাম যাই হোক না কেন দেশের মানুষ শান্তি চায়। চায় দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন সর্বোপরি একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা, একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা। আর এই সব কিছুর জন্য প্রয়োজন দেশে একটি গণমুখী নির্বাচিত জনগণের সরকার কায়েম করা।

এখন প্রশ্ন হল কি করে দেশে একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। আমার মনে হয় দুই দলকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, যদিও অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে না যে এই দুই দলের কোনো নেতারই দেশের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কোনো ভাবনা বা কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে সংশোধিত বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় বর্তমান এই অচলাবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে, আমার মনে হয় আমরা যদি সব রাজনৈতিক দল মিলে এই ব্যাপারে একটু চিন্তা ভাবনা করি তা হলেই একটি সঠিক সমাধান বের হয়ে আসবে।

এই ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে-

১। ক্ষমতাসীন দলের মেয়াদ শেষ হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুই দলের সমঝোতার ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন সম্পূর্ণ করা। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের সদস্যরা মেয়াদ উত্তীর্ণ সংসদের সদস্য হতে পারেন আবার না ও হতে পারেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে। তবে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ সংসদের সাবেক সদস্যদের কেউই কোনো বিশেষ মর্যাদা ভোগ করতে পারবেন না।

২। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের সদস্যরা কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

৩। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের সদস্যরা কোনো ভাবেই কোনো নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকবেন। তারা শুধু রাষ্ট্রীয় দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।

৪। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দল মনোনীত ব্যক্তি। একটি দল থেকে নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি এবং অন্য দল থেকে নির্বাচিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন কোনো অবিতর্কিত ব্যক্তি হতে হবে।

৫। একটি স্বাধীন সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধিনস্ত থাকবে। যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন যে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন। নির্বাচনকালীন সব প্রার্থী সমমর্যাদা ভোগ করবেন, কোনো প্রার্থীকেই বিশেষ কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে যে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা যে কোনো সময় বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের থাকবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে তিনি পরবর্তী দুইটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষিত হবেন।  

৬। নির্বাচনকালীন স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি কিংবা সাময়িক বরখাস্তের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে। যে কোনো নির্বাচনী এলাকায় সেনা বাহিনী মোতায়েনের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

৭। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন।

৮। প্রয়োজন হলে এক এক দিন এক এক বিভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। (আমার মনে হয় তাহলেই নির্বাচনকালীন সহিংসতা শত ভাগ রোধ করা সম্ভব হবে)   

আমরা দেশের মানুষরা শান্তি চাই, আমাদের জানমালের নিরাপত্তা চাই। দুই দলের প্রধান এবং রাজনৈতিক নেতাদেরর কাছে আমার আহ্বান আসুন আমরা সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি। আমরা আমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য রেখে যাই একটি সুন্দর সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ, যেই দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো আমাদের পূর্বপুরুষ, যেই দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলো আমাদের মুক্তি সেনারা।

উপরে উল্লেখিত প্রস্তাব সমূহ শুধু মাত্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। যদিও এই ব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের চিরস্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতেই হবে আমাদের। আর সেই জন্য প্রয়োজন একটি সম্মিলিত ঐকমত্য।     

দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে কিছু পুরানো কাসুন্দি ঘাটতেই হয়। আমরা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখেছি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বার বার নিজেদের স্বার্থে সংবিধানকে কাঁটা-ছেঁড়া করা হয়েছে। একটি দেশের সংবিধান তৈরি হয় সেই দেশের মানুষের স্বার্থে, সংবিধান দেশের মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়, এই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।

কোনো দেশের সংবিধান হল সেই দেশের সরকার এবং দেশ পরিচালনার জন্য একটি সর্ব সম্মত নীতিমালা। যার ভিত্তিতে দেশ ও দেশের সরকার পরিচালিত হবে। সংবিধান দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে। যে কোনো দেশের সংবিধান রচিত হয় সেই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুভূতি, সভ্যতার ইতিহাস প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে। আমাদের দেশের সংবিধানও রচনা করা হয়েছিলো সেই সব কিছু মাথায় রেখেই।

প্রতিটি দেশের সংবিধানে কিছু মৌলিক ভিত্তি থাকে যা সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না। যদিও সময়ের তাগিদে সংবিধান সবসময়ই পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন যোগ্য। সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ বা এমন কোনো বস্তু নয় যে, তার কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংস্কার কোনো দিনই করা যাবে না। এটা সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যাবে। আর সারা পৃথিবীতেই তা হয়ে থাকে।

আমাদের দেশে ও বহু বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে সংবিধান সংশোধন করা হয় দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে কিন্তু একমাত্র আমাদের দেশেই বার বার সংবিধানকে কাটাছেড়া করা হয় যখন যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের স্বার্থে এবং সেই সরকারের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার দুরভিসন্ধি নিয়ে।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান তৎকালীন সংসদে সর্বসম্মত ভাবে পাস করা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭ ধারার কিছু অংশে সর্বপ্রথম সংশোধনই আনেন ১৯৭৩ সালের ১৫ই জুলাই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৩ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর যাহার মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় জনগণের কিছু মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়। তৃতীয় সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর যাহার মাধ্যমে ভারত সরকারকে সীমান্ত সংক্রান্ত কিছু বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের সব মৌলিক অধিকার হরণ করে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করাসহ প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বাড়ানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার ব্যবস্থার ক্ষমতা খর্ব করা হয়। এই সব সংশোধনী করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান ও তার সরকার।    

পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল করে ১৯৭৫-এর ১৫ অগাস্ট থেকে ৯ই এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সব সামরিক অধ্যাদেশ এবং সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা প্রদান করা হয়। যা ১৯৭৯ সালের ৬ই এপ্রিল সংসদে পাস করা হয় এবং দেশে বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

ষষ্ঠ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫১ ও ৬৬ ধারা সংশোধন করা হয়।

সপ্তম সংশোধনী পাস করা হয় ১১ নভেম্বর ১৯৮৬। যার মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের জারী করা সব অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়া হয়।

অষ্টম সংশোধনী পাস করা হয় ১৯৮৮ সালের ৭ জুন যার মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশের ছয়টি বিভাগে হাই কোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ গঠন করা হয়, বেঙ্গলি কে বাংলা, ঢাকা বানান ইংরেজি তে Dacca থেকে Dhaka বানানো হয় এবং বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের রাষ্ট্রপতির আগাম অনুমতি ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো রকম পদক বা সন্মান গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে পাস করা নবম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের জনগণের উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অধিকারকে হরণ করে রাষ্ট্রপতি কতৃক নিয়োগের বিধান করা হয়।

১৯৯০ সালের ১২ই জুন দশম সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে ৩০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন সৃষ্টি করা হয়। যারা সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।

১৯৯১ সালের ১১ অগাস্টে সংবিধানের ১১তম সংশোধনীর মাধ্যমে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব শাহবুদ্দিন আহম্মদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ, এরশাদ কর্তৃক উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ এবং এরশাদ’র পদত্যগের পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে (১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগের পর থেকে ৬ অক্টোবর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি হিসাবে জনাব আব্দুর রাহমান বিশ্বাস এর নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত ) তার সমস্ত কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জনাব শাহবুদ্দিন আহম্মদ আবার তার পূর্ব দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির পদে ফেরার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  

একই দিনে পাসকৃত ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রপতিকে সংসদীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাহী প্রধানের মর্যাদা প্রদান করা হয়। উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের বিধান করা হয়।

২৬ মার্চ ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ নির্বাচন কালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।

এ ছাড়া আরও অনেকগুলি সংশোধনী আনা হয়েছে যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর Ordinance No 63 of 1975-এর মাধ্যমে ‘দালাল আইন বাতিল করা’;

১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর Second Proclamation Order No-3 of 1975 প্রথম তফসিল থেকে দালাল আইনের যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল;

১৯৭৬ সালে Second Proclamation Order No-3 of 1976-এর মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পুনঃর্প্রবর্তনের জন্য ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাদি রহিতকরণ;

১৯৭৭ সালে Proclamation Order No-1 of 1977 জারি করে সংসদে আলবদরদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ রহিতকরণ;

১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি যাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল নাগরিকত্ব ফেরত পাওয়ার জন্য তাদের আবেদনের অনুরোধ;

১৯৭৭ সালে Proclamation Order No-1 of 1977 দ্বারা সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ রহিতকরণ!

এরপর আরও বহুবার সংবিধানকে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের স্বার্থে কাটাছেড়া করেছে। সর্বশেষ কাটাছেড়া করেছে আওয়ামী লীগ সরকার যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যাবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। ফলস্বরূপ দেশ আজ এক মহাসংকটে পরেছে।  

এই সমস্ত সংশোধনীগুলো করা হয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে, এই সংশোধনগুলো দেশ জাতি জনগণের ভাগ্যের কতোটুকু পরিবর্তন করেছে তার বিচারের সময় এখন এসেছে। আমাদের এখুনি সংবিধানকে সংশোধন করে গণমুখী রূপ দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: Indemnity Ordinance 1975, being Ordinance No. 50 of 1975 which was ratified in the 5th amendment in 9 July 1979.


লেখক: সাইদুল ইসলাম মন্টু
পিএইচডি গবেষক, কার্টীন বিশ্ববিদ্যালয়, পার্থ, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া   
ই মেইল: s.montu@postgrad.curtin.edu.au                

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩
এসএটি/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।