ঢাকা, সোমবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

মুক্তমত

কৃষক তাজুল কি রাষ্ট্রীয় পদকের যোগ্য নন....

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫৯, নভেম্বর ২৮, ২০১৩
কৃষক তাজুল কি রাষ্ট্রীয় পদকের যোগ্য নন....

খুলনা: রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে ১৬ কোটি মানুষের আহার যোগান তাজুলের মতো কৃষকরা। আর এ আহার জোগাতে গিয়ে কতোই না কয়লা খাটুনি খাটেন তারা।

মাঠের সোনালী ফসলকে ঘিরেই তাদের সকল স্বপ্ন। তারা এমপি, মন্ত্রী কিংবা নিবার্হী চেয়ারে বসতে চান না। শুধু নাগরিকের চলনসই একটু সম্মান চান। চান ফসলের ন্যায্য দাম, মোটা চালের তিন বেলা ভাত। কুঁড়ে ঘরই তাদের মায়াময় ঠিকানা। তারা চান না সুরম্য প্রাসাদ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের ঠান্ডা তারা চান না, চান তাল পাতার পাখার শীতল বাতাস।

এই সাদা মাটা কৃষক তাজুলরা যখন মানুষের বিপদে এগিয়ে আসেন তখন ৫শ’ ট্রেন যাত্রীর জীবন বেঁচে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। তা কি শুধু কয়েকটি প্রতিবেদনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। নাকি দেশের সর্বোচ্চ পদক দিয়ে তাদের অবদানের কিছুটা স্বীকৃতি জানানো হবে?

বুধবার বাংলানিউজে চাঁদপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট পলাশ কাদেরের ‘‘৫শ’ যাত্রীর জীবন বাঁচালেন কৃষক তাজুল!” শিরোনামের একটি সংবাদ বাংলানিউজে আপলোড হওয়ার পর অবরোধের সংবাদ সংগ্রহের জন্য বাইরে থাকার কারণে আমি দেখার আগেই আমার স্ত্রী সংবাদকর্মী শরীফা খাতুন শিউলী পড়েন। তার কাছেই প্রথমে জানতে পারি চাঁদপুরের কৃষক তাজুলের মহৎ কাজের কথা। আমার মতো সংবাদকর্মীরা যখন সংঘাত, সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় এ ধরণের একটি সংবাদ বাংলানিউজে পড়ে মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম। মনে হলো তাজুলের মতো মানুষ আছে বলেই আমরা এখনও নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারছি।

সংবাদটি পড়ার পর স্ত্রীর অনুরোধ আমি যেন দেশের এই মহান মানুষটির যোগ্য সম্মান নিয়ে কিছু লিখি। সে দাবি জানায়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পদক দেওয়া উচিত এ কৃষককে। আর এ পদক দিলে  রাষ্ট্র নিজেও লাভবান হবে। একদিকে বিশ্ববাসী যেমন জানবে বাংলাদেশে ভালো মানুষ আছে, অন্যদিকে দেশের মানুষ উৎসাহী হবে কৃষক তাজুলের মতো ভালো কাজ করার।

সত্যিই এ অস্থির সময়ে তাজুল বাংলাদেশের গর্ব। একজন খাঁটি বাংলাদেশি। রেল লাইন উপড়ে ফেলা দেখে তার উপস্থিত বুদ্ধি মতে তিনি দৌঁড়ে বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর লাল রঙের পেটিকোট (মহিলাদের পরনের কাপড়) একটি লাঠিতে ঝুলিয়ে বের হয়ে আসেন। রেলপথ ধরে দৌঁড়ে ছুটে যান পশ্চিম দিকে। কারণ, সেদিক থেকেই ছুটে আসছে যাত্রীবোঝাই ট্রেন।

ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে নাড়তে থাকেন লাঠিতে বাঁধা পেটিকোট। লাল নিশান ও নিশানধারীর অভিব্যক্তি দেখে জরুরি ভিত্তিতে ট্রেন থামান চালক। বেঁচে যান চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের প্রায় ৫ শতাধিক যাত্রী। একই সঙ্গে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় সরকার ও জনগণ।

একজন কৃষকের এ সচেতনতা দেখে মানবিক গুণাবলী থেকে বঞ্চিত মানুষদের শিক্ষা না হলেও যার মধ্যে ন্যূনতম মানবিক গুণ রয়েছে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ভালো কাজ করার। আশা করি এ মহান মানুষটি তার কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান পাবেন। যদিও জানি কোনো কিছুর বিনিময় পাওয়ার আশায় তিনি এ কাজ করেন নি। একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে বলতে চাই তার কাছে আমাদের অনেক ঋণ। যা লিখনির মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সময়ে বিরোধী দলগুলোর হরতাল ও অবরোধে প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে রেল ও রেললাইন। দিনে ও রাতে ট্রেনের বগি, ইঞ্জিন ও রেললাইনে আগুন, লাইন তুলে ফেলা ছাড়াও চালককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বগি লাইনচ্যুত হয়েছে একাধিক স্থানে। নজিরবিহীন এ নাশকতায় দেশজুড়ে রেল যোগাযোগে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ১৮ দলের অবরোধের দ্বিতীয় দিন কৃষক তাজুল না থাকলে চাঁদপুরে আমাদের হয়তো বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ পড়তে হতো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।