ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রতিবন্ধিতা ও সামাজিক দায়িত্ব

রাবেয়া ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩
প্রতিবন্ধিতা ও সামাজিক দায়িত্ব

আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বলা যায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতিবছর সারাবিশ্বে ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানো।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও বেশ ঘটা করেই পালিত হবে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঁধ ভাঙ্গো দুয়ার খোলো একীভূত সমাজ গড়ো’।

প্রতিবন্ধিতা কি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইমপেয়ারমেন্ট হলো দেহের কোনো অংশ বা তন্ত্র যদি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, ক্ষণস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় সে অবস্থাটি। আর ইমপেয়ারমেন্টের কারণে প্রাত্যাহিক জীবনের কাজগুলো করতে না পারার অবস্থাটিই হলো ডিসএবিলিটি বা  প্রতিবন্ধিতা। যেমন, কারও যদি ডান হাতের কব্জির জয়েন্ট ভেঙে যায় তাহলে ডান হাত দিয়ে তার দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন-জামা পরা, খাওয়া, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে সমস্যায় পড়তে হবে।

প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ
বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্ব ব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী মানুষ হচ্ছে শতকরা ১৫ জন। শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গুত্ব বা বিকলাঙ্গতা মানুষকে প্রতিবন্ধী করে তোলে। প্রতিবন্ধী হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন: জন্মগত, বংশানুগত, জন্মের সময় মাথায় আঘাত পাওয়া বা অনভিজ্ঞ দাই এর ভ‍ুলের কারণে অথবা জন্মের পর বিভিন্ন রোগ, দুর্ঘটনাজনিত কারণ, পুষ্টির অভাবজনিত কারণ ইত্যাদি।
 
প্রতিবন্ধিতা ও আমাদের সমাজ
আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের প্রতি পদে পদে অবহেলিত। পত্রিকাতে প্রায়ই দেখা যায় পতিবন্ধীদের বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের কথা। অনেকেই মনে করে প্রতিবন্ধিতা সমাজের অভিশাপ। অনেকেই আবার পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলে তাকে বাইরে বের হতে দেয় না। ফলে তারা অযত্ন অবহেলায় একদিন মৃত্যু হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির।

তবে এখন ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’র মাধ্যমে প্রতিবন্ধীরা বর্তমানে বিনে পয়সায় বিভিন্ন থেরাপিউটিক সেবা পাচ্ছেন। যেমন- অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি এবং স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সার্ভিস। এছাড়াও বাংলাদেশে অনেকে বেসরকারি এনজিও সংস্থা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন কাজ করে থাকে ।

প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজের অংশ। তাদেরও সমাজে কিছু করে খাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের ভোকেশনাল ট্রেনিং নিয়ে তাদের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের প্রতিবন্ধকতাকে মেনে নিয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরির ক্ষেত্রেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে।

সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকরি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ
প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধে দরকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রয়োজন প্রতিবন্ধিতার কারণগুলো জেনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

   - মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য যোগান
   - সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
   - শিশুদের সময়মত টিকা দেওয়া
   - নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা
   - বাচ্চার যদি ডেভেলপমেন্ট স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো না হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের    পরামর্শ নেওয়া
  - প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধার ব্যবস্থা করা

প্রতিবন্ধীরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্টের বোঝা নয়, এই পৃথিবীতে তাদেরও কিছু দেওয়ার আছে। তাদের অবহেলা নয়, তাদের প্রয়োজন একটু স্নেহ একটু মমতার। এর জন্য প্রয়োজন আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন। তাহলেই আমরা একীভূত সমাজ গড়তে পারবো।

তাই আসুন আমরা সবাই গলা মিলিয়ে বলি ‘বাঁধ ভাঙ্গো দুয়ার খোলো একীভূত সমাজ গড়ো।

লেখক: রাবেয়া ফেরদৌস, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, প্রয়াস
সাভার সেনানিবাস
ইমেইল: rabeya1988@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।