ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘কিসের গণতন্ত্র! ঘেন্না করি...’

সাজিদ রাজু, বার্তাকক্ষ সম্পাদক, সময় টিভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৩
‘কিসের গণতন্ত্র! ঘেন্না করি...’

এক.
কম্পিউটারের কী বোর্ডে যখন খটখট শব্দে লিখে চলেছি, তখন আরেকটি ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলোর জোট। শনিবার সকাল থেকে আবারো টানা অবরোধ।

আবারো মানুষ হত্যার উল্লাস, আবারো ধ্বংসের উৎসবে মেতে ওঠার পদধ্বনি। আবারো রক্ত-লোলুপতা চরিতার্থ করার মহা আয়োজন।

 অথচ আগের কয়েক দিনের আর্তচিৎকার এখনো থামেনি। এখনো হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন অগ্নিদগ্ধরা। এখনো মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে সহিংসতার শিকার অসহায় অনেকেই। এসব পাশবিকতায় এবং আহতদের আর্তচিৎকারে  সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। কারণ যারা এসব ঘটাচ্ছেন তারা সাধারণ মানুষের কাতারের নন। সাধারণ এসব মানুষের রাজনৈতিক কোনো স্বার্থ পূরণের বাসনা নেই। এসবের সঙ্গে তাদের নেই ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতাও। সহিংসতার এমন দুটো ঘটনা বেশ মিলিয়ে দেখছেন তারা।

ঘটনাঃ ০১
২৮ নভেম্ব বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭১ ঘণ্টার অবরোধের তৃতীয় দিন। দিনের বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে নানা রকম দুর্ঘটনা, সহিংসতা আর বোমাবাজি। সবশেষ গণমাধ্যমে খবর এলা শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসে আগুন ধরে গেছে। আগুনে দগ্ধ হয়েছেন সাংবাদিক, আইনজীবী, পুলিশ সদস্য ও  ব্যবসায়ীসহ অন্তত ১৯ যাত্রী। তাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনাঃ ০২
২০০৪ সাল। তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ৫ জুন হরতাল ডেকেছে। সন্ধ্যায়ই গণমাধ্যমে চাউর হয়ে গেলে এরকমই একটি সহিংসতার খবর। ৪ জুন হরতালের আগের রাতে শেরাটন হোটেলের সামনে বিআরটিসি দোতলা বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা। সে আগুনে ৯ জন দগ্ধ হয়। আগুনের ভয়াবহতা থেকে, দুর্বত্তদের নৃশংসতা থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুও রক্ষা পায়নি।

দুটি ঘটনাই দারুণ মর্মপীড়াদায়ক। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়েছে ১৯ জন। আর ২০০৪ সালের আগুনে দগ্ধ হয়েছিল ৯ জন। মাঝে ব্যবধানও ৯ বছর। এই সময়ে দ্রব্যমূল্য যেমন বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের চাহিদা। মানুষের বয়স যেমন বেড়েছে, তেমনি গতি বেড়েছে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ারও। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা, হানাহানি আর মানুষ হত্যাই বা বাড়বে না কেন! সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাই বেড়েছে হিংসার আগুনের সীমাহীনতাও।

দুই.
সংবাদ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কিছু কথা বেশ নাড়া দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে। আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন মহলকে। নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মানুষকে। দেশের প্রভাবশালী একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাম্প্রতিক অবরোধ আর হরতালে নাশকতার প্রতি তাদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তারা। এক জনকে বলতে শুনলাম, "কিসের গণতন্ত্র, ঘেন্না করি এই গণতন্ত্র কে, লাথি মারি এই গণতন্ত্রকে``।

শব্দ চয়ন আর বলার সময় তার চোখে মুখে যে ঘৃণার প্রতিচ্ছবি দেখলাম, তাতেই বোঝা যায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে কতটা ক্ষুব্ধ তিনি। এই উক্তি শুধু ওই এক জন মানুষের নয়। আরো সহস্র মানুষের মনেও যে এমন ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তিন.
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চরম ক্ষোভ আর হতাশার পর অবশেষে দেশের আপামর জনসাধারণ হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ। সে সময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে আওয়ামী লীগ, সেই আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। অন্যদিকে গণতন্ত্র যখন হুমকির মুখে পড়েছিল, দেশ যখন একদলীয় শাসনের জালে বন্দি হয়ে কাতরাচ্ছিল, মানুষ যখন ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর অনটনের ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে পড়েছিল, তখন আবারো গণতন্ত্রের মুখোশ নিয়ে মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

সেই বিএনপি আজ দেশের প্রধান বিরোধী দল। দলের ভেতরেই কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে? বরং গণতান্ত্রিক ধারা থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রধান দুই দল দুই পরিবারনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন এসব দলের নেতা নেত্রীরা প্রার্থী বা মানুষ নয় বরং মার্কা/প্রতীক নির্ভর ক্যাম্পেইন চালানো শুরু করেছেন। বাদবাকি ছোট দলগুলোও তাদের আচরণ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই এমন এক নেতা/নেত্রীকেন্দ্রিক এবং মার্কা-নির্ভর গণতন্ত্রকে মনের দু:খে লাথি মারা ছাড়া আর কীইবা করতে পারে সাধারণ মানুষ?

বাংলাদেশ সময় ০৮৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।